বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ অস্ট্রেলিয়ায়

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:০৮, ২১ নভেম্বর ২০২৪;  আপডেট: ০০:৩৫, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ অস্ট্রেলিয়ায়

বিলটি আইন আকারে পাস হলে এটিই হবে কোনো দেশের তরফ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর আরোপ করা সবচেয়ে কঠোর কোনো আইন।

অস্ট্রেলিয়ার সরকারের তরফ থেকে একটি নতুন বিল উত্থাপন করা হয়েছে। এতে দেশটির ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দেশটির সংসদে বিলটি উত্থাপন করা হয়।

বিলটি আইন আকারে পাস হলে এটিই হবে কোনো দেশের তরফ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর আরোপ করা সবচেয়ে কঠোর কোনো আইন।

প্রস্তাবিত এ বিলটিতে যেসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত বিধি নিষেধ আরোপে ব্যর্থ হবে, তাদের ৫ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানারও প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে, এসব মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বয়স যাচাই ও শনাক্ত করার পদ্ধতিও চালু করতে চাইছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার।

এক বিবৃতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিস বলেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী সংস্কার। আমরা জানি, কোনো কোনো শিশু হয়তো এর একটি সমাধান বের করে ফেলবে, কিন্তু আমরা মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণ করার বার্তা দিতে চাই।’

দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি নতুন উত্থাপিত এ বিলে সমর্থন দিবে বলেই আশা করা হচ্ছে। তবে, নিরপেক্ষ কিছু দলসহ গ্রীন পার্টি এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে চাইতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে, প্রস্তাবিত বিলটি আইন আকারে বাস্তবায়িত হলে ইন্টারনেট ঘিরে যে একধরনের সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, দেশটির শিশুরা তা থেকে বঞ্চিত হবে এবং সমাজ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিশু কল্যাণ সংস্থা ও অনলাইন বিশেষজ্ঞরা।

একইসঙ্গে, এ ধরনের আইন ‘সব সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে শিশুদের রক্ষা’ করার পরিবর্তে বরং তাদের ‘অবৈধ ও নিষিদ্ধ অনলাইন নেটওয়ার্কের’ দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা তৈরি করবে এবং তাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ইউনিসেফের প্রধান কেটি মাস্কিল।

তবে, শিশুদের সমাজ থেকে আলাদা করে ফেলতে নয়, বরং তাদের রক্ষা করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী মিশেল রাওল্যান্ড।

তিনি বলেন, ‘শিশুদের রক্ষার উদ্দেশ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাদের শাস্তি দিতে বা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য নয়। একইসঙ্গে, এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আমরা দেশটির মা-বাবাকে এ বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, তাদের শিশু সন্তানদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ প্রশ্নে আমরা তাদের পাশে আছি।’

এ প্রসঙ্গে রাওল্যান্ড একটি সরকারি গবেষণার উল্লেখ করেন, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার ৯৫ শতাংশ মা-বাবা তাদের শিশু সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে অনলাইন নিরাপত্তাকে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এ বিষয়ে সংসদে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিশু অনলাইনে মাদকের ব্যবহার, আত্মহত্যা বা নিজের ক্ষতি করার মতো মারাত্মক ক্ষতিকর ও অন্যান্য নৃশংস সব বিষয় দেখে থাকে। এছাড়া, এক চতুর্থাংশ শিশু এমন সব বিষয় দেখে যেখানে প্রায়ই অনিরাপদ খাদ্যাভাসকে উৎসাহিত করা হয়।’

তবে, যেসব অনলাইন প্রতিষ্ঠান শিক্ষামূলক, খুদে বার্তা, খেলাধুলা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে উপকারী অ্যাপ ব্যবহার করে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে বলে মন্ত্রী জানান। এক্ষেত্রে, গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউব, গুগল ক্লাসরুম, হোয়াটসঅ্যাপ ও হেডস্পেস সুবিধা পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্ত্রী রাওল্যান্ড বলেন, ‘আমরা এটা বলছি না যে খুদে বার্তা পাঠানোর অ্যাপ বা অনলাইন গেইমে কোনো ঝুঁকি নেই। বরং, এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী অন্য ব্যবহারকারীর মাধ্যমে ক্ষতিকর বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতেই পারে। তবে, এক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন কঠোর থাকলে তারা এর মধ্য দিয়ে আগের মতো ভয়ঙ্কর ক্ষতির ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকবে।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি স্পেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর বয়স ১৬ বছরের কম হতে পারবে না বলে একটি প্রস্তাব পাস করে। এর আগে দেশটিতে এক্ষেত্রে বয়সসীমা ছিলো অনুর্ধ্ব ১৪ বছর।

এছাড়া, গত বছর ফ্রান্সেও ১৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়। অন্যদিকে, প্রায় এক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওই দেশের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১৩ বছরের কম বয়সীদের মা-বাবার অনুমতি ছাড়া এ ধরনের মাধ্যম ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলে আসছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে।