চাকরির বাজারের ৪০ শতাংশকে প্রভাবিত করবে এআই : আইএমএফ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
প্রকাশিত: ২০:৫৮, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪; আপডেট: ২১:২১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একইসাথে সুবিধা ও অসুবিধার ব্যাপার। ছবি : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
চাকরির বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে এমন দাবি করা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে সব ধরনের চাকরির অন্তত ৪০ শতাংশ এআইয়ের দ্বারা প্রভাবিত হবে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে চাকরির বাজারে বিদ্যমান অসমতা আরো বাড়বে বলে উল্লেখ করা হয় ।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম-এ বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সম্মেলনের সময় আইএমএফের এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো।
গত রবিবার এক পোস্টে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিভিন্ন দেশের সরকারকে নিরাপত্তা বলয় তৈরি ও এআইয়ের প্রভাব মোকাবেলায় নতুন ব্যবস্থা চালুর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, 'বর্তমানে বিদ্যমান সার্বিক অসমতাকে এআই আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। তবে সমাজে বিদ্যমান অস্থিরতা ঠেকাতে গিয়ে প্রযুক্তিকে ঠেকানোর ভুল প্রবণতা সঠিকভাবে মোকাবিলা করা দরকার।'
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একইসাথে সুবিধা ও অসুবিধার ব্যাপার বলে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করে। বিশেষ করে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর ক্ষেত্রে এআই কাজে লাগিয়ে তাদের কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব।
কিন্তু বর্তমানে শ্রম দিয়ে করছে, মানুষের এমন অনেক কাজই এআই করতে সক্ষম। ফলে কায়িক শ্রমের চাহিদা কমে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে অনেকের চাকরি হারানোর ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
তবে বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোতে চাকরির বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা প্রভাবিত হলেও স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে এ হার ২৬ শতাংশের মতো বলে আইএমএফের বর্তমান বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে জর্জিয়েভা বলেন, যেসব দেশে এআইকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর মতো অবকাঠামো নেই তারা এ প্রযুক্তির সুবিধাগুলো নিতে পারবে না। এর ফলে বিশ্বে বিভিন্ন দেশের মধ্যে এরইমধ্যে যে অসমতা বিরাজ করছে, তা আরো বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে।'
এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে ধনী দেশগুলোর তরুণদের মধ্যে যারা এআই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে ও কাজে লাগাতে পারবে, অন্যদের সঙ্গে তাদের আয়ের বৈষম্য অনেক বেড়ে যাবে। এর বিপরীতে দরিদ্র দেশগুলোর ও বেশি বয়সী কর্মীরা অনেক পিছিয়ে পড়বে বলে জানানো হয়।
জর্জিয়েভা এ বিষয়ে আরও বলেন, 'এ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা আরো কার্যকর করতে হবে। এআইকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি চাকরি হারানোর ঝুঁকির মুখে পড়া কর্মীদের সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।'
এর আগে ২০২৩ সালে গোল্ডম্যান স্যাকস-এর এক প্রতিবেদনেও এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিলো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন চাকরিচ্যুতি ঘটতে পারে বলে তখন এতে উল্লেখ করা হয়। তবে চাকরিচ্যুতির পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও এআইনির্ভর নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হবে বলেও প্রতিবেদনেটিতে জানানো হয় ।
উল্লেখ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বশেষ সংস্করণ চ্যাটজিপিটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে এআই প্রযুক্তি একটি প্রধান আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়। গত মাসে ইউরোপিয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা এআই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে প্রথমবারের মতো একটি নীতিমালার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে ঐকমত্যে পৌঁছেন।
অ্যালগরিদমের নকশা প্রণয়ন ও এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে চীনও বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে জাতীয় নীতিমালা ঘোষণা করেছে।
এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে এআই ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত নিরাপত্তা ইস্যুটি সরকারকে জানাতে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিবিদ বা উদ্ভাবকদের বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনা হয়েছে বলে জানানো হয়।
এদিকে গত নভেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যে আই সেইফটি সামিট আয়োজিত হয়। এতে এআই নির্মাতা বেশ কয়েকটি দেশ নিরাপদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ক একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
সূত্র : বিবিসি।