যুক্তরাষ্ট্রে পাস হলো নতুন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২:৪৫, ২৬ জুন ২০২২; আপডেট: ০১:২২, ২৯ অক্টোবর ২০২২
উন্নত দেশগুলোর মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতাজনিত মৃত্যুর ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিলে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এ বিল দেশটির আইনে পরিণত হলো। গতকাল শনিবার তিনি এ বিলে স্বাক্ষর করেন। নতুন এ আইনের সাহায্যে এখন কম বয়সী ক্রেতাদের কাছে অস্ত্র বিক্রির আগে তাদের সম্পর্কিত সব তথ্য খতিয়ে দেখা এবং সন্দেহভাজন যে-কোনো ব্যক্তির কাছে থাকা অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার অধিকার পেলো দেশটির রাজ্যগুলো।
দেশজুড়ে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করার পক্ষে সংঘটিত ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে চলতি সপ্তাহে দ্বিদলীয় এ বিল কংগ্রেসে পাস করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিলে স্বাক্ষরের পর জো বাইডেন বলেন, 'যদিও আমি যা চেয়েছিলাম, নতুন এ আইনে তার সবকিছু নেই, তারপরও এতোদিন ধরে নিরীহ জীবন বাঁচাতে আমাদের যে প্রচেষ্টা তার অনেকটাই এর মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন হবে।'
বন্দুক হামলায় নিহতদের স্বজনদের কথা উল্লেখ করে বাইডেন আরো বলেন, 'তারা বহুদিন ধরেই সরকারের কাছে একটা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আজ এর কিছুটা হলেও আমরা করতে পারলাম।'
এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিলে বর্তমান ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেট ও বিরোধী রিপাবলিকান - উভয় দলই সমর্থন দিলো, যা দেশটির জন্য আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এর আগে এ ধরনের যে-কোনো বিলেই ভেটো দিতো রিপাবলিকান দল। অবশ্য আইন আকারে পাস হওয়ার পর এখনও এর বিরোধিতা করে যাচ্ছে দেশটির বন্দুক ব্যবহারের অধিকারের পক্ষের সংগঠন দ্য ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন (এনআরএ)। তাদের মতে, এ আইনের মাধ্যমে অস্ত্র ব্যবহারজনিত সহিংসতা কমানো সম্ভব নয়।
নতুন এ আইনে যে বিধানগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে এগুলোর মধ্যে রয়েছে : ২১ বছরের কম বয়সী ক্রেতাদের কাছে অস্ত্র বিক্রির আগে তাদের অতীত সম্পর্কে খুব ভালোভাবে খোঁজ নেওয়া; মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও স্কুলগুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলে ১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন; সন্দেহভাজন ব্যক্তির অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করতে রাজ্যগুলোর তহবিল বাড়ানো; যে-কোনো ধরনের পারিবারিক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত অপরাধীর অস্ত্র রাখার অধিকার বাতিল করা ইত্যাদি।
তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ অস্ত্র নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর আইনের পক্ষে থাকা সংগঠনগুলো আরো বড় ধরনের সংস্কারের চেষ্টা করেছিলেন। এর মধ্যে ছিলো 'অ্যাসল্ট রাইফেল' ধরনের অস্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বা অন্তত এর ক্রেতাদের বয়সসীমা আরো বাড়ানো।
উল্লেখ্য, স্কুল-শপিং মল-হাসপাতাল-চার্চসহ জনসমাগমস্থলে বন্দুকধারীর আকস্মিক ও বেপরোয়া হামলার ঘটনা দেশটিতে নিয়মিত ঘটনা। গত মে মাসেই নিউইয়র্কের বাফেলোর একটি সুপারমার্কেট এবং টেক্সাসের ইউভালদের একটি প্রাইমারি স্কুলে বন্দুকধারীর বেপরোয়া গুলিতে শিশুসহ মোট ৩১ জন নিহত হন। বর্তমানে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের হাতে প্রায় ৩৯৩ মিলিয়ন আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতাজনিত মৃত্যুর ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি।
গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ নামের একটি অলাভজনক গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র ব্যবহারজনিত সহিংসতায় এ বছর ২০,৯০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু দেশটির নাগরিকদের বড় একটি অংশই সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে সুরক্ষিত 'অস্ত্র অধিকার' বজায় রাখার পক্ষে।
এর আগে সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে পাস করা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে অ্যাসল্ট রাইফেলসহ মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্রের অধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে এক দশক পরই এটি বাতিল হয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের অস্ত্র ব্যবহার সীমিত করা একটি আইন সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশে খারিজ হয়ে গেলে অস্ত্র রাখার বৈধতার আওতা কার্যত বেড়ে যায়।
সূত্র : বিবিসি।