রাজনীতি

সিরিয়ার সংখ্যালঘুদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ

হামলার সঙ্গে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না : সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:১৪, ১১ মার্চ ২০২৫

হামলার সঙ্গে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না : সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

সিরিয়ার ক্ষমতা দখল করা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রধান শাহরা আসাদ সরকারের অনুগতদের খুঁজে বের করে তাদের উপর্যুক্ত শাস্তি দেওয়ারও প্রতিজ্ঞা করেন।

সিরিয়ায় সাধারণ নাগরিকদের হত্যার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেছেন দেশটির প্রধান নেতা আহমেদ আল-শাহরা। দেশটির সংখ্যালঘু আলাওয়াত ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে শত শত নাগরিক হত্যার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার তিনি এ কথা বলেন। 

সিরিয়ার পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় আলাওয়াত সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো এ হামলায় প্রায় ৮৩০ সাধারণ নাগরিক নিহত হয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা এ তথ্য জানায়। গত শুক্র ও শনিবার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। 

তবে, হত্যাকাণ্ডে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে, আসাদ সরকারের পতনের পর এটিই এ পর্যন্ত দেশটিতে গণহত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনা। 

এদিকে, আসাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিরিয়ার ক্ষমতা দখল করা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রধান শাহরা আসাদ সরকারের অনুগতদের খুঁজে বের করে তাদের উপর্যুক্ত শাস্তি দেওয়ারও প্রতিজ্ঞা করেন। দেশটির জাতীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। 

এদিকে, সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৩১ জন এবং আসাদ সমর্থিত যোদ্ধাদের মধ্যে ২৫০ জন নিহত হয়। এর মধ্য দিয়ে এ সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডে মোট ১ হাজার ৩১১ জন নিহত হয়েছে বলে দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) সূত্রে জানা যায়। 

গত রবিবার এ ঘটনা সম্পর্কে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শাহরা বলেন, ‘আমরা আজ এমন এক সময়ে এসে পৌঁছেছি,  যেখানে আমাদের নতুন বিপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে - পতিত সরকারের দোসর ও তাদের ভিনদেশী সহায়তাকারীরা আজ এ অবস্থার সৃষ্টি করে আমাদের দেশে গৃহযুদ্ধ লাগানোর অপচেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য দেশের ঐক্য ও স্থিতিশীলতায় ফাটল ধরিয়ে দেশটিকে ধ্বংস করে দেওয়া।’ 

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানায় প্রকাশিত ওই ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সঙ্গে জানাচ্ছি যে, নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে যারা আমাদের নাগরিকদের উপর হামলা চালায় এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’ 

প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। আর যাদের হাত আজ সাধারণ সিরীয় নাগরিকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে তাদের খুব শিগগিরই আইনের আওতায় কঠোর শাস্তি পেতে হবে।’ 

এর আগে গত রবিবার এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তে একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠন করা হয়েছে বলে টেলিগ্রামের মাধ্যমে তিনি ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে, নাগরিকদের উপর সহিংসতার এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মধ্য দিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে বলেও জানান তিনি। 

এদিকে, তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেও তার সমর্থকদেরও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি প্রেসিডেন্ট। সিরিয়ার উপকূলীয় প্রদেশ লাটাকিয়া ও তারতোসে এ ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে। 

বরং, দামেস্কের একটি মসজিদে দেওয়া আলাদা একটি ভাষণে প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আল্লাহ চাইলে আমরা সবাই এদেশে মিলেমিশে থাকতে চাই।’ 

আসাদ সরকারের পতনের পর এটিই এ পর্যন্ত দেশটিতে গণহত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনা।

তবে, রবিবার থেকে লাটাকিয়া, জাবলা ও বানিয়াসে সংঘর্ষের ঘটনা অনেকটা কমে এসেছে। এক সিরীয় নিরাপত্তা কর্মীর বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানায়। 

মূলত, গত বৃহস্পতিবার সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর উপর চোরাগুপ্তা হামলার ঘটনা ঘটে। এর পর পরই সংখ্যালঘু ওই সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর উপর এ হামলাকে ‘জঘন্য’ বলে এর নিন্দা করেছেন সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। 

এদিকে, নিরাপত্তা বাহিনীর উপর সংঘটিত এ হামলার ঘটনার পরেই আসাদ সমর্থকদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সহিংসতা শুরু হয়।  এ ঘটনার পর পরই এর প্রতিবাদে দামেস্কের রাস্তায় নেমে আসে শত শত মানুষ। 

তবে, নিরাপত্তার স্বার্থে ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় এলাকার অনেক বাসিন্দা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতেও বাধ্য হয়। এদের মধ্যে অনেকে পাশের দেশ লেবাননে আশ্রয় নেয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। 

উল্লেখ্য, সিরিয়ার লাটাকিয়া ও তারতোস প্রদেশ ছিলো দেশটির সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থকদের মূল ঘাঁটি। আসাদ নিজেও ছিলেন আলাওয়াত সম্প্রদায়ের সদস্য। 

সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সুন্নী ভাবধারার হলেও আলাওয়াত সম্প্রদায় শিয়া মুসলিম। এ সম্প্রদায় দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ।এদিকে, ক্ষমতায় থাকাকালীন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত আসাদ বরাবরই শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইরানের সমর্থন পেয়ে এসেছে। 

তবে, গত বছরের ডিসেম্বরে দেশব্যাপী বিদ্রোহীদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে আসাদ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। 

এর আগে বেশ কয়েক দশক আসাদ ও তার পরিবার দেশটিতে একটানা দমনমূলক ও নৃশংস শাসন চালায়। একইসঙ্গে, দেশটিতে গত ১৪ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলমান ছিলো। 

সূত্র : বিবিসি।