রাজনীতি

গাজা পুনর্গঠনে মিশরীয় পরিকল্পনায় আরব বিশ্বের অনুমোদন

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৩:১৯, ৬ মার্চ ২০২৫;  আপডেট: ২২:০৬, ৬ মার্চ ২০২৫

গাজা পুনর্গঠনে মিশরীয় পরিকল্পনায় আরব বিশ্বের অনুমোদন

ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধে গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িঘরই হয় ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনে একটি মহা-পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছে মিশর। রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত আরব লীগের সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে উত্থাপিত এ প্রস্তাবে সর্বসম্মতভাবে সমর্থন জানিয়েছে আরব বিশ্বের নেতারা । 

তাঁর দেওয়া প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার ঘোষণা দিতে গিয়ে সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, ‘এটি গৃহীত হয়েছে।'

এ ক্ষেত্রে, একটি খসড়া নথিতে তিনি পাঁচ বছরের একটি মহা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন, যার মধ্য দিয়ে গাজার পুনর্গঠনে ৫৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে, এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড এর বাসিন্দাদেরই থেকে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, ‌'ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা না গেলে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা কখনোই সম্ভব নয়। শান্তি কখনো জোর করে আনা যায় না এবং এর উপর জোর খাটানোও যায় না।’  

তবে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যেকোনো ধরনের প্রস্তাব ও পরামর্শকে স্বাগত জানানো হবে বলে সম্মেলনে শেষে প্রকাশিত এক বার্তায় মিশরের প্রেসিডেন্ট জানান। এ ক্ষেত্রে, আরব বিশ্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানানো হয়। 

কিন্তু, আরব নেতাদের উদ্যোগে গাজা পুনর্গঠনের এ প্রস্তাব পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে, মার্কিন  প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী এ অঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র স্থানাস্তর করে যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে এ ভূখণ্ডে ‘উপকূলীয় অঞ্চল’ নির্মাণ করা হবে বলে আবারও দেশটির প্রশাসন থেকে জানানো হয়। একইসঙ্গে, গাজায় হামাসের কোনো অবস্থান গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও মার্কিন প্রশাসন জানায়। 

এদিকে, কায়রোর এ সম্মেলন ও গাজা পুনর্গঠনের প্রস্তাব ‘বাস্তবতা বিবর্জিত’ বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একইসঙ্গে, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ কার্যকর করতে হামাসকে অবশ্যই সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হতে হবে বলেও দাবি জানায় ইসরায়েল। তবে, দেশটির এ দাবিকে ‘বিপদজনক’ বলে উল্লেখ করেছে হামাস। 

অন্যদিকে, গাজা পুনর্গঠনে আরব বিশ্বের প্রস্তাবকে জাতিসংঘ থেকে স্বাগত জানানো হলেও গাজার ক্ষমতা হামাসের অধীনে থাকতে পারবে না বলে সংস্থাটির মুখপাত্র ব্রায়ান হিউ জানান। 

তবে, মিশরের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইন ও সিরিয়া। 

একইসঙ্গে, এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে এক বিবৃতিতে হামাস লিখেছে, ‘আমরা এমন একটি আরব শাসনের দিকে তাকিয়ে আছি যার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকায় দখলদারিত্বের কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকটের অবসান হবে। একইসঙ্গে, ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূখণ্ড থেকে স্থানাস্তরের পরিকল্পনাও বাতিল করা সম্ভব হবে।’ 

তবে, গাজা পুনর্গঠনের এ পরিকল্পনা অনেক বিশাল এবং এতে প্রচুর সময়ের প্রয়োজন বলে এ প্রস্তাব সম্বলিত ১১২ পৃষ্ঠার খসড়া নথি থেকে জানা যায়। খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা থেকে শুধু ধ্বংস্তূপ সরিয়ে অস্থায়ী বাড়িঘর নির্মাণেই ৬ মাস সময় লাগবে এবং প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে বলে জানা গেছে। 

পরবর্তীতে, পরিকল্পনার প্রথম ধাপে আগামী দুই বছরে এই উপত্যকায় ২ লাখ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ২ লাখ বাড়ি নির্মাণ করা হবে। আর, ২০৩০ সালের মধ্যে এখানে ৩ মিলিয়নেরও বেশি বাসিন্দার জন্য নতুন বাড়িসহ বিমানবন্দর, শিল্প এলাকা, হোটেল ও পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়। 

তবে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের যথাযথ সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মিশরের প্রেসিডেন্ট জানান। এ ক্ষেত্রে, তার কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। 

এদিকে, বিশাল এ অর্থের জোগানের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সংযুক্ত আরব-আমিরাত ও সৌদি আরবের উপর অনেকাংশেই নির্ভর করতে হবে। কিন্তু, বর্তমানে গাজা উপত্যকা পরিচালনাকারী ইসলামী দল হামাসকে এ দেশ দুটি সমর্থন করে না। ফলে, এটি একটি সমস্যা হিসেবে আর্বিভূত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজার সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও পুরোপুরি হিসেব করা সম্ভব হয় নি। তবে, উপত্যকাটির প্রায় ৭০ শতাংশ অবকাঠামোই ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জাতিসংঘের স্যাটেলাইটে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়। আর, এর মধ্যে ২ লাখ ৪৫ হাজারটিই ঘরবাড়ি বলে জানা গেছে। 

সূত্র : ডয়চে ভেলে, সিএনএন।