রাজনীতি

আফগান নারীদের চাকরি দেওয়া সব এনজিও বন্ধের ঘোষণা তালেবান সরকারের

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:০২, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪;  আপডেট: ২২:১০, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

আফগান নারীদের চাকরি দেওয়া সব এনজিও বন্ধের ঘোষণা তালেবান সরকারের

আফগানিস্তানে ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত কাজে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশটির পুলিশ প্রায়ই দেশটির নারীদের এ কাজে বাধা দেয়।

আফগানিস্তানের নারীদের চাকরি দেওয়া সব দেশি ও বিদেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির তালেবান সরকার। গত রবিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

গত দুই বছর আগে আফগানিস্তানে অবস্থিত বিভিন্ন এনজিওগুলোকে আফগান নারী কর্মীদের বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছিলো তালেবান সরকার। নারী কর্মীরা সঠিকভাবে হিজাব পড়েনা বলে সে সময় কারণ দেখানো হয়েছিলো।

এক্সে প্রকাশিত বার্তায় আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সতর্ক করে বলা হয়, যে সব এনজিও সরকারি এ আদেশ যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হবে, আফগানিস্তানে তারা কাজ করার লাইসেন্স হারাবে।

সরকারের নতুন এ সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জাতিসংঘ বলেছে, গত দুই বছরে আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার নাটকীয়ভাবে সংকুচিত হয়ে আসছে। এ সময় তালেবান সরকারকে এ নির্দেশের বিষয়টি আবারও ভেবে দেখার আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের সহযোগী মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সতো নিনো-মার্টিনেজ এ বিষয়ে বলেন, ‘আফগানিস্তানে মানবিক সংকট মোকাবেলায় আমরা যে ভূমিকা পালন করি, এই সিদ্ধান্ত আমাদের এই কাজে বড় বাধা তৈরি করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর এ বিষয়ে আমরা খুবই চিন্তিত যে, আমরা এমন একটি দেশের কথা বলছি যার জনসংখ্যার অর্ধেকই মানবাধিকার বঞ্চিত এবং দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে, এবং শুধু নারীরা নয় বরং সমাজের সব স্তরে এ মানবিক সংকট প্রবল।’

তবে, দেশি ও বিদেশি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন, সমন্বয়, মালিকানা এবং কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে তাদের জবাবদিহি করতে হয় বলে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।

এক্ষেত্রে, নতুন এ চিঠিতে তালেবানের আওতাধীন নয়, এমন সব প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মীদের কার্যক্রম স্থগিতে আবারও সরকার থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।
 
মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বার্তায় বলা হয়, ‘এ নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর সব কার্যক্রম বন্ধ করা হবে এবং মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনুমোদিত লাইসেন্সও বাতিল করা হবে।’

এদিকে, এটি তালেবান সরকারের আফগানিস্তানে চলমান এনজিওগুলোকে নিয়ন্ত্রণে বা এর কাজে হস্তক্ষেপের নতুন কোনো উদ্যোগ।

এর আগে, চলতি মাসের প্রথম দিকেও এসব এনজিওতে কাজ করা আফগান নারীদের একটি বড় অংশকে কাজে যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে জাতিসংঘের সেক্রেটারি কাউন্সিল থেকে জানানো হয়।

আফগানিস্তানে ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত কাজে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশটির পুলিশ প্রায়ই দেশটির নারীসহ অনেক আফগান পুরুষকেও এ কাজে বাধা দেয় বলে জাতিসংঘের এক শীর্ষ কর্মকর্তা টম ফ্লেচার জানান।

তবে, তাদের কোনো কাজে বাধা দেওয়া বা কোনো কার্যক্রম বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে তালেবান সরকার।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর তালেবান সরকারের নারীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের এটি হতে যাচ্ছে নতুন আরেক উদাহরণ।

এর আগেও এ সরকারের তরফ থেকে নারীদের অন্যান্য চাকরিতে অংশ নিতে বাধা দেওয়া হয়। এমনকি জনসমাগমস্থলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের উপর জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা।

একইসঙ্গে, ষষ্ঠ শ্রেণীর পর আরও কোনো আফগান কন্যাশিশু পড়াশোনা করতে পারবে না বলে নির্দেশ দেয় তালেবান সরকার।

সূত্র : সিএনএন।