ভারতে ‘বুলডোজার জাস্টিস’ এর উপর সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২:২৯, ১৩ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২২:৫১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
কারও বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আগে ওই বাড়ির মালিককে কমপক্ষে পাঁচদিন আগে আইনি নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভারতে জনগণের বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলতে সরকারি নির্দেশনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া অপরাধের কারণ দেখিয়ে জনগণের বাড়িঘর ভাঙ্গা যাবে না বলে এতে উল্লেখ করা হয়। ভারতে এ ধরনের কাজকে ‘বুলডোজার জাস্টিস’ বলা হয়ে থাকে।
সুপ্রিম কোর্টের এ আদেশে বলা হয়, ‘এ ধরনের উদ্যোগ আইনের নীতি বিরোধী এবং এটি গ্রহণযোগ্য নয়।’ এক্ষেত্রে, অবৈধ স্থাপনা বাদ দিয়ে যথাযথ কারণ না থাকা সত্ত্বেও সুনির্দিষ্ট কিছু স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগকে বৈআইনি ও উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে বিবেচনা করা হবে। একইসঙ্গে, শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে তা করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
আদালত থেকে এ ধরনের কার্যকলাপকে ‘যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে অভিযুক্ত ব্যক্তির মতামত প্রকাশের সুযোগ না দিয়েই তাকে শাস্তি দেওয়ার সমান’ বলে ধরে নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
ফলে, এক্ষেত্রে কারও বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আগে ওই বাড়ির মালিককে কমপক্ষে পাঁচদিন আগে আইনি নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে, অন্যান্য নিয়মকানুনের সঙ্গে সঙ্গে কোর্টের আদেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তার মতামত জানানোর সুযোগ দেওয়ারও উল্লেখ করা হয়।
এক্ষেত্রে, পুরো ঘটনা বিচার বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী না নির্দোষ তা একমাত্র যথাযথ আইনানুগ সংস্থাই নির্ধারণ করবে বলে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ অবস্থায় যথাযথ আইন না মেনে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে তা আইনের মূলনীতি ও নিয়ম-কানুন পরিপন্থী হবে বলে সতর্ক করা হয়।
উল্লেখ্য, ভারতে ‘অবৈধ অভিবাসী’ উল্লেখ করে প্রায়ই মুসলিমদের বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ রয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) উপর। ভারতের মানবাধিকার সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা এ অভিযোগ করে থাকে।
যদিও অবৈধ বসতবাড়ি ভাঙ্গতে এ উদ্যোগ বলে সরকার থেকে দাবি করা হয়; কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমদের হয়রানি ও কোণঠাসা করতে এসব করা হয় বলে অভিযোগ সংস্থাগুলোর। এর ফলে মোদি সরকারের শাসনামলে ভারতে এ নিয়ে ব্যাপক ধর্মীয় উত্তেজনারও সৃষ্টি হয়ে আসছে।
সম্প্রতি রাজধানী দিল্লীসহ বিজেপি শাসিত আসাম, গুজরাট, মধ্য ও উত্তর প্রদেশে ‘শাস্তি’ হিসেবে বিভিন্ন এলাকার মানুষের বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়। মূলত, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানো বা সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদ করার কারণে এ উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়। গত ফেব্রুয়ারিতে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে লন্ডনভিত্তিক এ সংস্থাটি।
অন্যদিকে, গত বছর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী চার দিনে ওই রাজ্যের ৭৫০টিরও বেশি বাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয় সরকারি কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে, রাজ্যের হাইকোর্ট থেকে এসব কার্যকলাপের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব হয়।
এক্ষেত্রে, গুঁড়িয়ে দেওয়া অধিকাংশ দোকান ও অন্যান্য স্থাপনাই ছিলো মুসলিম মালিকানাধীন। তবে, স্থাপনাগুলো অবৈধ ছিলো বলে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
একইসঙ্গে, বিশেষ কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় নয় বরং আইনানুযায়ী অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে বরাবরই দাবি করে আসছে বিজেপি সরকার।
তবে, একে ‘ভারতের সংবিধানিক মূল্যবোধের ধস’ বলে উল্লেখ করেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির নেতা রাহুল গান্ধী।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।