রাজনীতি

গাজা যুদ্ধের এক বছর

ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান ফ্রান্সের

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:১১, ৬ অক্টোবর ২০২৪;  আপডেট: ২২:২৯, ৬ অক্টোবর ২০২৪

ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান ফ্রান্সের

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত নিয়ে বিভিন্ন দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ছবি : তুর্কিয়ে টুডে।

ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন গতকাল শনিবার এ আহ্বান জানান। আগামীকাল ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলার এক বছর সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। এখনও দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ বিরতি সম্ভব হয়নি, বরং, যুদ্ধের পরিধি দিন দিন বেড়ে চলেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের সংকটময় এ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে ব্রডকাস্ট ফ্রান্স ইন্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের এখন একটি রাজনৈতিক সমাধানে ফিরে যাওয়া উচিত। আর, সেটি হচ্ছে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা।’

ইসরায়েলে কোনো অস্ত্র সরবরাহ করছে না ফ্রান্স। তবে, বার বার যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানানোর পরও গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। এসব বিষয় উল্লেখ করে ম্যাক্রোন আরও বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে কোনো অস্ত্র সরবরাহ করছি না। কিন্তু, এটাও সত্যি যে আমাদের আহ্বানেও কেউ সাড়া দিচ্ছে না। আমি মনে করি এটি অনেক বড় একটি ভুল। এমনকি এটা ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্যও একটি বড় হুমকি।’

এ সংঘাত একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মানুষের মনে ঘৃণা জিইয়ে রাখবে বলেও মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোন। এ সময় লেবাননে স্থল হামলা চালাতে সেনা পাঠানোয় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের পরিধি যাতে আর না বাড়ে, নেতানিয়াহুর সে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিলো। লেবাননের জনগণের এ পরিণতি হতে পারে না, লেবানন কোনোভাবেই আরেকটি গাজায় পরিণত হতে পারে না।’

এদিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এসব মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। একে ‘লজ্জাজনক’ উল্লেখ করে তার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসরায়েল যেখানে ইরানের বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে, সেখানে যেকোনো সভ্য দেশেরই ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু, তা না করে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোনসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ আমাদের অস্ত্রের উপর অবরোধ আরোপের কথা বলছে। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক।’

তবে, নেতানিয়াহুর এ মন্তব্যের পর শনিবার দিনশেষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে ইসরায়েলকে ফ্রান্সের ভালো বন্ধু বলে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে, নেতানিয়াহুর এ মন্তব্য অপ্রয়োজনীয় ও দুই দেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিপন্থী বলেও জানানো হয়।

কিন্তু, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এসব মন্তব্য শুধু ইসরায়েল নয় বরং তাদের জোট যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটি বার্তা। কারণ, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সররাহ করছে। তবে, গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলে কিছু অস্ত্র সরবরাহের উদ্যোগ বাতিল করে ইংল্যান্ড। মূলত, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে, এ ধরনের কাজে এগুলো ব্যবহারের ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে, এই বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সে সময় দেশটির তরফ থেকে জানানো হয়।

এদিকে, ম্যাক্রোনের এ মন্তব্যের প্রশংসা করেছে কাতার ও লেবানন। তার এ মন্তব্য গাজায় যুদ্ধবিরতির পথকে সুগম করবে বলে আশা প্রকাশ করে এ যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার। অন্যদিকে, এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ না করার গুরুত্ব ও মধ্যপ্রাচ্যে এর পরিণতি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে লেবানন মন্তব্য করে।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোন এমন সময়ে এসব মন্তব্য করলেন, যখন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারোত চার দিনের মধ্যপ্রাচ্য সফরে রয়েছেন। আগামীকাল সোমবার ইসরায়েলের মধ্য দিয়ে তার এ সফর শেষ হবে। কূটনৈতিক এ সফরের মধ্য দিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছে ফ্রান্স।

এক্ষেত্রে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার কারণে গাজা যুদ্ধের একটি রাজনৈতিক সমাধানে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নিতে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

সূত্র : আল-জাজিরা।