রাজনীতি

হাইতিতে মানবিক সংকট : ৭ লাখের বেশি বাস্তচ্যুত

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২ অক্টোবর ২০২৪;  আপডেট: ২৩:০২, ২ অক্টোবর ২০২৪

হাইতিতে মানবিক সংকট : ৭ লাখের বেশি বাস্তচ্যুত

রাজধানীর অস্থায়ী একটি শিবিরে খাবারের জন্য অপেক্ষা বাস্তচ্যুত বাসিন্দাদের।

হাইতিতে মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। নিজ বাড়িঘর ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে ৭ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু। দেশটিতে বন্দুক সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আজ বুধবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক একটি সংস্থার প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

হাইতির বাসিন্দাদের বাস্তচ্যুত হওয়ার বর্তমান এ হার জুনের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এ তথ্য জানায়।

দেশটিতে বন্দুক সহিংসতার কারণে গত মাসেই নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ। হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে পশ্চিমে অবস্থিত গ্রেসিয়ার নামক জায়গায় এ সমস্যা সবচেয়ে তীব্র বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জটিল এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে। হাইতিতে আইওএমের প্রধান গ্রেগরি গুডস্টেইন আজ এ বিষয়ে বলেন, ‘হাইতির বাস্তুচ্যুত জনগণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে, যে সব এলাকার বাসিন্দারা অশান্ত এ পরিস্থিতিতেও আমাদের পাশে রয়েছে তাদের অব্যাহত সমর্থন আশা করছি।’

হাইতিতে এরইমধ্যে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের ৭৫ শতাংশ দেশের বিভিন্ন প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে শুধু গ্র্যান্ড সাড নামের এলাকাতেই এ হার ৪৫ শতাংশ বলে আইওএমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া, বাস্তচ্যুতদের ৮৩ শতাংশকেই দেশটির বিভিন্ন এলাকার কোনো না কোনো পরিবার নিজ বাড়িতে আশ্রয় ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সাহায্য করছে বলেও সংস্থাটি থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে, বাকি যেসব বাসিন্দা এখনও রাজধানীতে রয়েছে তাদের অধিকাংশই অস্থায়ীভাবে তৈরি শরণার্থী শিবিরের ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এসব জায়গায় তারা দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর সামগ্রীও ঠিকমতো পাচ্ছে না। এছাড়া, এলাকার পরিস্থিতি এখনও অশান্ত ও অনিশ্চিত।

এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশজুড়ে স্থিতিশীল ও নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ অব্যাহত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে, এ পরিস্থিতির কারণে যারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে, তাদের জন্যও মানবিক সাহায্য নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।’

উল্লেখ্য, ক্ষমতাশালী ও সশস্ত্র বিভিন্ন সন্ত্রাসী দলের নানা কর্মকাণ্ডের কারণে হাইতিতে বহু বছর ধরে অশান্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রায় ক্ষেত্রেই এসব দলের সঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী দলের নেতাদের সখ্যতার খবর পাওয়া যায়। এসব দল ও নেতাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দে দেশটিতে এ ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে, গত ফেব্রুয়ারিতে অবস্থা চরম আকার ধারণ করে। কারণ, সে সময় এসব সন্ত্রাসী দলগুলো রাজধানীর বিভিন্ন কারাগার ও সরকারি কার্যালয়গুলোতে ব্যাপক হামলা চালাতে শুরু করে। পরিস্থিতির অবনতি হলে এক সময় হাইতির প্রধানমন্ত্রী এরিয়াল হেনরি পদত্যাগে বাধ্য হন।

অশান্ত এ পরিস্থিতির কারণে চলতি বছরের এ সময় পর্যন্ত দেশটিতে ৩ হাজার ৬০০ এরও বেশি মানুষ নিহত হয়। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

একইসঙ্গে, বর্তমানে দেশটির ৪৮ শতাংশ মানুষ চরম খাদ্য ঘাটতিতে রয়েছে। গত সোমবার ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সূত্র : আল-জাজিরা।