রাজনীতি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিতর্ক অনুষ্ঠিত

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:১৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪;  আপডেট: ০১:৫০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিতর্ক অনুষ্ঠিত

উত্তেজনাপূর্ণ এ বিতর্ক অনুষ্ঠানে উভয় প্রার্থীই জোরালোভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটিক দলের কমলা হ্যারিসের মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নভেম্বরে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে মঙ্গলবার বিকেলে ফিলাডেলফিয়ায় প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।

উত্তেজনাপূর্ণ এ বিতর্ক অনুষ্ঠানে উভয় প্রার্থীই জোরালোভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। একইসঙ্গে নিজ নিজ যুক্তি উস্থাপনের সময় অন্যের যুক্তি খন্ডনেও ছিলেন তারা সরব।

জনগণের কাছে ট্রাম্পের কোনো অবস্থান নেই উল্লেখ করে হ্যারিস বলেন, ‘দেশের ৮ কোটি ১০ লাখ জনগণ ট্রাম্পকে ত্যাগ করেছে। আর, এটি স্বীকার করে নিতে ট্রাম্পের এখনও অনেক কষ্ট হচ্ছে।’

এ অবস্থায় নিজের যুক্তি উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তার নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান এজেন্ডা মূল্যস্ফীতি, অনিবন্ধিত শরণার্থী সমস্যার বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কারাগার, পাগলা গারদ এবং মানসিক আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লাখ লাখ মানুষ আমাদের দেশে প্রবেশ করছে। তারা আসছে এবং আমাদের দেশের সব চাকরির বাজার দখল করে নিচ্ছে। বর্তমানে এসব চাকরি রয়েছে আফ্রিকান-আমেরিকান, হিস্পানিক ও ইউনিয়নগুলোর হাতে।’

তবে, নিজের নির্বাচনী প্রচারণার স্লোগান ‘আমরা পেছনে ফিরে যাচ্ছি না’ এর উল্লেখ করে মার্কিনীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করেন কমলা হ্যারিস। এ সময় ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নেতিবাচক ও সেকেলে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে, বিতর্কের পুরোটা সময়ই আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে ছিলেন কমলা হ্যারিস। বিপরীতে, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক দলের নেতা জো বাইডেনের বিভিন্ন ব্যর্থতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন ট্রাম্প। একইসঙ্গে, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসকেও এর দায়ভার নিতে হবে বলে এ সময় দাবি করেন তিনি।

বিতর্কের শুরুতেই ট্রাম্প প্রশ্ন করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কি গত চার বছরের তুলনায় এখন আরও ভালো আছে?’ কিন্তু, সরাসরি এর উত্তর না দিয়ে হ্যারিস বলেন, ‘আমি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছি। আর এই মঞ্চে আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্ত ও কর্মজীবীদের প্রতিনিধিত্ব করছি।’

তবে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা সত্যিই নাজুক। এখন মার্কিনীরা তাদের মুদি দোকানের রসিদের দিকে তাকালেই পার্থক্যটা বুঝতে পারে বলে উল্লেখ করেন ইন্ডিয়ানাপোলিস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক লরা মেরিফিল্ড।

কারণ, তার মতে, চার বছর আগে তারা যে দামে পণ্য কিনতে পারতো, এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, অর্থনীতির প্রশ্নে হ্যারিসের সরাসরি ট্রাম্পের প্রশ্নের উত্তর না দেওয়াটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। একইসঙ্গে, নির্বাচনে হ্যারিস জয়ী হলে কিভাবে দেশ এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন করেন এই অধ্যাপক।

তবে, গর্ভপাত প্রশ্নে বরাবরের মতোই শক্ত অবস্থানে ছিলেন কমলা হ্যারিস। এ বিষয়ে নিজের ও নিজ দলের অবস্থান জানিয়ে জয়ী হলে দেশে প্রয়োজনীয় গর্ভপাতকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আবারও নিজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রশ্নে দুই প্রার্থীই ছিলেন নিজ নিজ অবস্থানে অনঢ়। হ্যারিস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইসরায়েলের অস্তিত্ব থাকবেনা বলে বিতর্কের এক পর্যায়ে অভিযোগ করেন ট্রাম্প।

একইসঙ্গে, নির্বাচিত হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া সমস্যার সমাধান করবেন বলেও তিনি দাবি করেন। তবে, গত তিন বছর তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট থাকলে ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে কোনো যুদ্ধই শুরু হতো না বলেও জোরালোভাবে দাবি করেন ট্রাম্প।

বিপরীতে, এ বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে হ্যারিস বলেন, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। কিন্তু, কিভাবে তারা এটা করছে, সেটি হচ্ছে দেখার বিষয়।’ এ সময় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের অতর্কিত আক্রমণের সমালোচনা করলেও তিনি বলেন, ‘এটাও সত্যি যে, অনেক নিরীহ ফিলিস্তিনি মারা যাচ্ছে।’

এ অবস্থায় নির্বাচিত হলে এ যুদ্ধ বন্ধ ও দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের উদ্যোগ নিবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আত্মরক্ষার স্বার্থে তারা ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে যাবে বলেও হ্যারিস জানান।

কিন্তু, পরস্পর সাংঘর্ষিক এ বিষয় দুটির মধ্যে তিনি ও তার সরকার কিভাবে ভারসাম্য রক্ষা করবে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে ইন্ডিয়ানাপোলিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর অধ্যাপক উলসন বলেন, ‘ট্রাম্প অনেক বেশি উদ্ধত থাকার কারণে তার প্রশ্নগুলো সহজেই বাতিল করে দেওয়া হ্যারিসের পক্ষে সহজ হয়েছে। তবে,আমি এটাও মনে করি যে, অস্ত্র সরবরাহ করার পরও কিভাবে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ও যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব হবে, এ বিষয়টি তিনি এখানে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর এটিই হচ্ছে এখন সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন।’

তবে, ইউক্রেন প্রশ্নে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন হ্যারিস। এক্ষেত্রে, দেশটিকে সাহায্যে অন্যান্য দেশের সহায়তায় একটি জোট গঠনের কথা বলেন তিনি। বর্তমান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ যুদ্ধ বন্ধের কথা বলেছেন কারণ, এ ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি হাল ছেড়ে দিয়েছেন।’

সূত্র : ডয়চে ভেলে।