রাজনীতি

গাজায় ৬ জিম্মির মৃত্যু

ইসরায়েলে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও অবরোধের ঘোষণা

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪;  আপডেট: ০০:৩২, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইসরায়েলে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও অবরোধের ঘোষণা

গাজায় প্রায় ১১ মাস আগে ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর এটিই দেশটিতে সরকার বিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।

ইসরায়েলে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি গাজায় হামাসের কাছে জিম্মি থাকা ছয় ইসরায়েলির মৃত্যুর ঘটনার পর গতকাল রবিবার রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ মানুষ। এ সময় তারা গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানায়। একই দাবিতে আজ সোমবার থেকে দেশজুড়ে অবরোধের ডাক দিয়েছে ইসরায়েলের শীর্ষ শ্রমিক সংগঠন।

গাজায় প্রায় ১১ মাস আগে ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর এটিই দেশটিতে সরকার বিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘এখনই! এখনই!’ বলে স্লোগান দেয়। একইসঙ্গে, তারা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে গাজায় যুদ্ধ বিরতি ও হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের উদ্ধারের দাবি জানায়। অনেক আন্দোলনকারী এ সময় রাজধানী তেল আবিবে রাস্তা অবরোধ করে ও পশ্চিম জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

অন্যদিকে, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর এবারই প্রথম প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন হিসটাদ্রাত। এ সময় সংগঠনটি যুদ্ধ বিরতির জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে অবরোধের ডাক দেয়।

হিসটাদ্রাতের প্রধান আর্নোন বার-ডেভিড এ বিষয়ে বলেন, ‘একটি চুক্তি এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। কিন্তু, সেই চুক্তির পরিবর্তে আমরা শুধু লাশ পেয়ে যাচ্ছি।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার সকাল আটটা থেকে ইসরায়েলের বেন গুরিওন বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে, আজ বেশ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিলো তেল আবিবের প্রশাসনিক কার্যক্রমও।

এক্ষেত্রে, ইসরায়েলের প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ পর্যায়ের উৎপাদক ও উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানেরও সমর্থন পাচ্ছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। একইসঙ্গে, অবরোধে সমর্থন জানিয়ে জিম্মিদের জীবিত উদ্ধার করতে না পারা নেতানিয়াহু সরকারের ব্যর্থতা বলে অভিযোগ করেছে দ্য ম্যানুফাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন অব ইসরায়েল।

এদিকে, নতুন করে আরও ছয় জিম্মির মৃত্যু নেতানিয়াহুর ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ফোরাম ‘হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম’ এর সদস্যরা। এক বিবৃতিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয় যে, নেতানিয়াহু হামলা বন্ধ ও তাদের পরিবারের জিম্মি সদস্যদের ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর একটি চুক্তি করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

ফোরামের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ১১ মাস হামাসের জিম্মায় থাকাকালীন অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার হয়ে অভুক্ত অবস্থায় গত কিছুদিন আগে তাদের মৃত্যু হয়।’ এ অবস্থায় রাস্তায় প্রতিবাদ করে ও পুরো দেশ অচল করে দিলেই কেবল বাকি জিম্মিদের জীবিত ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন এক বিক্ষোভকারী।

কিন্তু, দেশব্যাপী পরিকল্পিত এ অবরোধকে ব্যর্থ করে দিতে উদ্যোগি হয়েছে ইসরায়েলি সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির অ্যার্টনি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারাকে আদালতে জরুরি বার্তা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোর্টিজ।

এ ধরনের অবরোধের আইনি কোনো ভিত্তি নেই বলে অ্যার্টনি জেনারেলকে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। তার মতে, এ ধরনের উদ্যোগ অনুপযুক্ত। কারণ, এটি রাজনীতিবিদদের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে, যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করবে।

এছাড়া, এ ধরনের অবরোধের কারণে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে তা দেশের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যুদ্ধকালীন সময় এসব সিদ্ধান্ত দেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, বেশ কয়েক মাস ধরেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির নানা আলোচনা হয়ে আসছে। কিন্তু, এর কোনটিই এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। আর, এজন্য অধিকাংশ সময়ই  ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করা হয়।

যদিও, একটি কার্যকর চুক্তির মধ্য দিয়েই কেবল হামাসের কাছে জিম্মি  নাগরিকদের জীবিত ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

সূত্র : আল-জাজিরা।