চীনের বিরুদ্ধে জাপানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৭ আগস্ট ২০২৪; আপডেট: ২১:৪৪, ২৭ আগস্ট ২০২৪
চীন এর আগে কখনোই জাপানের আকাশসীমা এভাবে লঙ্ঘন করেনি।
চীনের বিরুদ্ধে জাপানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তাদের আকাশসীমায় চীনের গোয়েন্দা বিমান অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে বলে গতকাল সোমবার অভিযোগ করে দেশটি। এ অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে ঘটনাটি হবে এ বিষয়ক আইন সরাসরি লঙ্ঘনের প্রথম উদাহরণ।
গতকাল স্থানীয় সময় বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটায় চীনের ওয়াই-৯ মডেলের একটি নজরদারি বিমান জাপানের ডানজো দ্বীপের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ করা হয়। বিমানটি সেখানে প্রায় ২ মিনিট অবস্থান করে।
এ ঘটনাকে 'একেবারেই অগ্রহণযোগ্য' বলে মন্তব্য করেছে জাপান কর্তৃপক্ষ। এমনকি, ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে টোকিওতে চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তাকেও তলব করে দেশটি।
এদিকে, অনুপ্রবেশের পরপরই চীনা বিমানটিকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জাপানের গণমাধ্যম এনএইচকে-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। কিন্তু, কোনো ধরনের অস্ত্র দিয়ে বিমানটিকে আক্রমণ করা হয়নি বলে জানায় গণমাধ্যমটি।
তবে, এ নিয়ে কূটনৈতিক সূত্রের মাধ্যমে বেইজিংয়ে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঠেকাতে নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু, এর জবাবে বেইজিং এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর-এর পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইয়ান চং বলেন, 'চীন কখনোই জাপানের আকাশসীমা এভাবে লঙ্ঘন করে না। তাই, এবারের অনুপ্রবেশের এ ঘটনা খুবই উদ্বেগের কারণ।'
তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাইওয়ান ও ফিলিপাইনের সঙ্গে চীন এমন আচরণই করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তাইওয়ান ও ফিলিপাইনে শুধু গত দুই-তিন বছরেই চীনের এমন অনুপ্রবেশের অন্তত কয়েকশ ঘটনা ঘটেছে। দুটি দেশই চীনের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
তবে, চীন এমন আচরণ চলমান রাখবে বলেই ধারণা দেশ দুটির। ফলে, নিরাপত্তার কারণে ভবিষ্যতে চীনের এমন কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে বর্তমানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে তাইওয়ান ও ফিলিপাইন।
এদিকে, ওকিনাওয়াসহ জাপানের দ্বীপগুলোতে তেল ও গ্যাসের মতো খনিজ সম্পদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ জাপানের অন্যান্য মিত্র দেশগুলো এ সম্পদের ব্যাপারে বরাবরই আগ্রহী। এসব দেশের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্বের এটিও একটি বড় কারণ।
এছাড়া, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিও ওকিনাওয়াতে অবস্থিত। তাইওয়ান, ফিলিপাইন ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি জাপানের সেনকাকু দ্বীপের কাছে চীনা জাহাজের অবস্থান শনাক্ত করে দেশটি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভান বর্তমানে বেইজিংয়ে সফরে আছেন। এ সপ্তাহে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে তার বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান সঙ্কটগুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অধ্যাপক চং মনে করেন, এ ধরনের পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, ওয়াশিংটন হয়তো তা নিশ্চিত করার উপায় খুঁজবে। তবে, এ ব্যাপারে তাদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, জাপান যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রসহ জাপানের অন্যান্য মিত্র দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বরাবরই এ অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আসছে চীন। এ নিয়ে এ অঞ্চলে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই জাপানে অনুপ্রবেশের এ ঘটনা ঘটলো।
সূত্র : বিবিসি।