থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন
দায়িত্ব গ্রহণ করলেন থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতোংতার্ন
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৮ আগস্ট ২০২৪; আপডেট: ২২:১৪, ১৮ আগস্ট ২০২৪
দায়িত্ব গ্রহণের পর থাইল্যান্ডের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রা।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রা। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতোংতার্ন আজ রবিবার এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে ৩৭ বছর বয়সী পেতোংতার্ন সর্বকণিষ্ঠ হিসেবে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন।
থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত থেকে প্রধানমন্ত্রী স্রেত্থো থাভিসিনের প্রধানমন্ত্রীত্ব বাতিল করার পরই এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন পেতোংতার্ন। এর আগে থাইল্যান্ডের রাজা মাহাভাজিরালংকর্ন পেতোংতার্নকে দেশটির প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থাইল্যান্ডের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রা। আনুষ্ঠানিকতা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির নতুন এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার প্রধান হিসেবে আমি সংসদ সদস্যদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো নতুন উদ্যোগকে সাদরে গ্রহণ করবো।’
পেতোংতার্ন আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একা সব কাজ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। আশা করি আমি মন্ত্রীবর্গ, রাজনৈতিক জোট, প্রশাসন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অর্থ্যাৎ থাইল্যান্ডের প্রত্যেকটি প্রজন্ম ও মেধাবী ব্যক্তির সঙ্গে একসাথে কাজ করতে সমর্থ হবো।’
এছাড়াও, তিনি তার পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মতোই অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রণোদন ও সংস্কার করাসহ অবৈধ মাদক চোরাচালান দমনের অঙ্গীকার করেন। একইসঙ্গে, দেশের আন্তর্জাতিকমানের স্বাস্থ্যসেবার আরও উন্নয়ন এবং লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যকে এগিয়ে নিতে কাজ করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেনি তিনি।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পেতোংতার্নের বাবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা (৭৫)। এ সময় তিনি তার মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে সামনের সারিতে উপস্থিত ছিলেন।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর মেয়ে সম্পর্কে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ বলেন, ‘তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। তার সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে, সে এখনও তরুণ। তাছাড়া, সে এতো বিনয়ী যে প্রয়োজনে সে সবার কাছেই সাহায্য চাইতে পারবে।’
আবেগ আপ্লুত থাকসিন সিনাওয়াত্রা আরও বলেন, ‘তেইশ বছর আগে সে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু, আজ আমি তার পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’
উল্লেখ্য, পেতোংতার্ন তার পরিবারের তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে এ দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। এর আগে তার বাবা থাকিসন ও ফুফু ইয়াংলং সিনাওয়াত্রা এ দায়িত্ব পালন করেন। প্রভাবশালী এ পরিবারটি দশকের পর দশক ধরে থাইল্যান্ডের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে তাৎপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।
একইসঙ্গে, দেশটির রাজকীয় ব্যবস্থা ও এর অধীনস্থ সেনাবাহিনীর সমালোচনা করেও বার বার আলোচনার জন্ম দেয় সিনাওয়াত্রা পরিবার। পেতোংতার্নের বাবা ও ফুফু উভয়কেই সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
এদিকে, গত তিন বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পেতোংতার্ন। এর আগে তিনি তাদের পারিবারিক হোটেল ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। পরবর্তীতে, ২০২৩ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি রাজনীতিতে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। সে সময় তিনি তার বাবার ফিউ থাই পার্টিতে যোগ দেন এবং এ দলের অন্যান্য শরিকরা তাকে তাদের নেতা নির্বাচিত করে।
ওই নির্বাচনে তার দল ৩১৪টি সংসদীয় আসনে জয় লাভ করে। প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য ৪৯৩ সদস্যের সংসদের প্রায় অর্ধেকের সমর্থন প্রয়োজন ছিলো পেতোংতার্নের। এক্ষেত্রে, এমন কয়েকজন সেনাপ্রধান তাকে সমর্থন দেন, যারা আগে তার বাবার বিরোধিতাকারী হিসেবে পরিচিত ছিলো।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।