ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো স্পেন, নরওয়ে এবং আয়ারল্যান্ড
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৮ মে ২০২৪; আপডেট: ২৩:৩৬, ২৮ মে ২০২৪
আয়ারল্যান্ডের সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে দেশটির সংসদ ভবনে উত্তোলন করা হয় ফিলিস্তিনের পতাকাও।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিলো স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ে। আজ মঙ্গলবার দেশ তিনটির তরফ থেকে
এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধের দিকে সবার দৃষ্টি ফেরানো এবং এর একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করাই এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য বলে দেশগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়।
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিমোন হ্যারিস একে ‘ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকেও এ সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, বর্তমানে গাজায় যুদ্ধবিরতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হ্যারিস আরও বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং আমি মনে করি এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকে এই বার্তা দেওয়া সম্ভব হয়েছে যে দেশ হিসেবে আমরা এমন উদ্যোগ নিতে পারি। এর মধ্য দিয়ে এমন এক সময় দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আশাকে জাগিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে, যখন অন্য দেশগুলো বিনা কারণে ওই অঞ্চলে বোমা মেরে যাচ্ছে।’
একে 'নরওয়ে-ফিলিস্তিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ দিন’ বলে উল্লেখ করেছেন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস্পান বার্থ এডি। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এ বিষয়ে বলেন, ‘ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা শুধু নয়; বরং, শান্তিকামী সবার জন্যই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।’
এদিকে, দেশগুলোর প্রতীকী এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে ইসরায়েলের। কারণ, এর মধ্য দিয়ে তারা সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করছে বলে অভিযোগ করে দেশটি। এমনকি, এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে এবং স্পেন থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইসরায়েল। একইসঙ্গে, তেল আবিবে নিযুক্ত দেশ তিনটির রাষ্ট্রদূতদেরও ডেকে পাঠানো হয়েছে।
তবে, ইউরোপীয় এ তিনটি দেশের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের উপর কূটনৈতিক চাপ আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, এরইমধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক আদালত থেকে ইসরায়েলকে গাজায় হামলা চালানো বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধাপরাধ করছেন বলেও অভিযোগ করে সংস্থা দুটি।
এদিকে, দেশভেদে কূটনৈতিক স্বীকৃতির বিষয়টি ভিন্ন হলেও রামাল্লায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ের। এক্ষেত্রে, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর বা পূর্ব জেরুজালেমে বিদ্যমান দেশগুলোর দূতাবাস বা এ ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে আনুষ্ঠানিক দূতাবাসে পরিণত করা হবে। একইসঙ্গে, সেখানে কর্মরত দেশ তিনটির প্রতিনিধিদের পূর্ণ মেয়াদে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
এক্ষেত্রে, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগে নির্ধারিত সীমানার ভিত্তিতে বর্তমান ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে দেশগুলোর পক্ষ থেকে জাননো হয়। একইসঙ্গে, জেরুজালেম ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল - উভয়েরই রাজধানী হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৩টি রাষ্ট্র আরও আগেই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি, আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, চেচনিয়া, সুইডেন এবং সাইপ্রাস। শিগগিরই এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে স্লোভানিয়া, মাল্টা এবং বেলজিয়াম।
তবে, মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান সহিংস পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সমাধানের জন্যই শুধু তারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিবে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের অন্যান্য কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সূত্র : বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা।