বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়ন করলো ভারত
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২:০০, ১১ মার্চ ২০২৪; আপডেট: ২২:৪৮, ১২ মার্চ ২০২৪
নয়া দিল্লিতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের অবস্থান। ফাইল ছবি/এএফপি।
সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) বাস্তবায়ন করেছে ভারত সরকার। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে আজ সোমবার আইনটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলো সরকার। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার এ আইনটি পাশ করে। কিন্তু তখন দেশজুড়ে বিতর্ক-প্রতিবাদের কারণে তা প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি।
সরকারের এক মুখপাত্র এ বিষয়ে বলেন, ‘মোদি সরকার সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) বাস্তবায়ন করেছে। এটি বিজেপির ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত জনগণকে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে সাহায্য করবে।’
ভারতের বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের অমুসলিম শরণার্থীদের জন্য ২০১৯ সালে এ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি পাস করা হয়। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়াই ছিলো এ আইনের প্রধান উদ্দেশ্য।
মূলত আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে পালিয়ে আসা অমুসলিমদের এ আইনের আওতায় সুবিধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রে হিন্দু, পার্সি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী যেসব নাগরিক ওইসব দেশ থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করেছে, এ আইনের আওতায় তারা নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ পাবে বলে জানা যায়।
কিন্তু আইনটি পাস হওয়ার পরপরই একে ‘মুসলিম-বিরোধী’ বলে এর প্রতিবাদ করে ভারতের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। একইসঙ্গে, ভারতের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের দীর্ঘদিনের অসাম্প্রদায়িক ভাবধারার সঙ্গেও এটি সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে আইনটির সমালোচনা করা হয়।
একসময় আইনটির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। এক পর্যায়ে রাজধানী নয়া দিল্লিতে সংগঠিত সহিংসতায় এক ডজনের বেশি নাগরিক নিহত ও কয়েকশো জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তাদের বেশিরভাগই মুসলিম নাগরিক বলে জানা যায়।
এ আইনের সঙ্গেই ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনস (এনআরসি) নামে আরেকটি আইনের প্রস্তাব করা হয়। এ আইনটি ভারতে বসবাসকারী ২০ কোটি মুসলিম নাগরিকের জন্য বৈষম্যমূলক বলেও ওই সময় ব্যাপক প্রতিবাদ করা হয়। কারণ, এর মধ্য দিয়ে দেশটির সীমান্তবর্তী কিছু রাজ্যের মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে বলে আশঙ্কা দেখা দেয়।
এদিকে, প্রস্তাবিত ওই এনআরসিতে সব ভারতীয় নাগরিকের রেজিস্ট্রার অর্থাৎ দেশটির নাগরিক হিসেবে নিবন্ধিত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। ২০০৩ সালে ভারতের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনীতে প্রস্তাবটি উল্লেখ করে পরে আইন হিসেবে পাস করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়। মূলত ভারতের সব বৈধ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করাই ছিলো এর উদ্দেশ্য, যাতে অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত ও দেশ থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব হয়।
এ ক্ষেত্রে আইনটি মুসলিম-বিরোধী বলে যে অভিযোগ ওঠে, মোদি সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করা হয়। একইসঙ্গে, কারও কাছ থেকে তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া নয় বরং এটি নিশ্চিত করাই এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য বলেও উল্লেখ করা হয়। এ কারণে দেশজুড়ে সংগঠিত প্রতিবাদ-আন্দোলন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও ওইসময় অভিযোগ করে মোদি সরকার।
উল্লেখ্য, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো দেশটিতে সরকার গঠনের আশা করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
সূত্র : আল-জাজিরা।