রাজনীতি

হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো ইসরায়েল

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ৮ অক্টোবর ২০২৩;  আপডেট: ১২:০৫, ৯ অক্টোবর ২০২৩

হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো ইসরায়েল

রবিবার সকালে ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমান গাজার ৪২৬ টি এলাকা লক্ষ্য করে ক্রমাগত হামলা চালায়।

ফিলিস্তিনের ইসলামী দল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো ইসরায়েল। গাজায় বড় ধরনের সেনা হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে আজ রবিবার যুদ্ধের এ ঘোষণা দিলো দেশটি। গতকাল শনিবার হামাসের আকস্মিক এক হামলায় শত শত ইসরায়েলি নিহত হয়। এর পরই মূলত এ যুদ্ধের ঘোষণা দেয় দেশটি।

শনিবার ও আজ রবিবার গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে এ পর্যন্ত হাজার হাজার রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। এসব রকেট ইসরায়েলের রাজধানী তেল-আবিবসহ আরও অনেক জায়গাতেই আঘাত হানে।

একইসঙ্গে হামাসের অস্ত্রধারী সেনারা ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিসহ বিভিন্ন শহর ও গ্রামেও অনুপ্রবেশ করে। এ সময় তারা বেসামরিক নাগরিকের উপর হামলা চালানোসহ অনেককে জিম্মি করে।

এসব হামলায় এ পর্যন্ত ৫০০ জনের মতো নিহত ও আরও প্রায় ২ হাজারের বেশি ইসরায়েলি আহত হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা সিএনএন ও দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিতে ফিলিস্তিনি সেনাদের অনুপ্রবেশ খুবই বিরল একটি ঘটনা। কারণ এটি লোকালয় থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং খুবই কঠোর সামরিক পাহারার মধ্যে থাকে। ১৯৪৮ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এবারই প্রথম কোনো ফিলিস্তিনি দলের ইসরায়েলে এ ধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটলো। এছাড়া গত প্রায় ১৭ বছরেরও বেশি সময় পরে হামাস কোনো ইসরায়েলি সেনাকে তার নিজ এলাকা থেকে অপহরণ করলো।

অপহৃত এসব ইসরায়েলি সেনাদের গাজায় নিয়ে বন্দী করা হয়েছে বলে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। অপহৃতদের মধ্যে সেনাসহ সাধারণ জনগণও রয়েছে বলে এর আগে দলটি থেকে দাবি করা হয়। একইসঙ্গে এসব এলাকায় হামলা চালানো হলে এর কঠিন জবাব দেওয়া হবে বলেও সতর্ক করে হামাস।

শনিবার ও আজ রবিবার গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে এ পর্যন্ত হাজার হাজার রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস।

দলটির অস্ত্রধারী সেনা শাখা আল কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা শনিবার এ বিষয়ে বলেন, ‘গাজা এবং এর জনগণকে হুমকী দিয়ে এখন কোনো লাভ হবে না। গাজা উপত্যকার জনগণের সঙ্গে যা করা হয়েছে এখন তাদের সঙ্গে সেটাই করা হবে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির  আর কোনো সুযোগ নেই।’

গত বেশ কয়েক মাস ধরেই হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সহিংসতা বাড়ছিলো। এ অবস্থাতেই বহু দশকের মধ্যে প্রথম দেশটিতে এ ধরনের আকস্মিক হামলার ঘটনা ঘটলো। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তবে এ হামলার প্রতিশোধ নিবেন বলে সতর্ক করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু । তার দেশ এর ‘উপযুক্ত জবাব’ দিবে বলে এ সময় প্রতীজ্ঞা ব্যক্ত করেন তিনি। একইসঙ্গে সামনে দীর্ঘ ও কঠিন যুদ্ধের জন্য তার দেশ প্রস্তুত হচ্ছে বলেও নেতানিয়াহু সতর্ক করেন। এ অবস্থায় গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের এখনই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তবে এরইমধ্যে গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। একইসঙ্গে বিভিন্ন গ্রামসহ সেনা ঘাঁটি এবং সীমান্তেও হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের যুদ্ধ চলছে।

রবিবার সকালে ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমান গাজার ৪২৬ টি এলাকা লক্ষ্য করে ক্রমাগত হামলা চালায় বলে দেশটির প্রতিরক্ষা দল সূত্রে জানা যায়। লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে হামাস ব্যবহৃত ১০টি টাওয়ার রয়েছে বলেও জানা গেছে। এর আগে শনিবার রাতে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা জঙ্গি আস্তানায় ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে বলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এসব হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও প্রায় ২ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২০ জন ও আহতদের মধ্যে ১২১ জন শিশু বলেও জানানো হয়।

তবে এর মধ্য দিয়ে সেনারা জঙ্গি দমন করাসহ এ অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে বলে নেতানিয়াহু দাবি করেন। এ অবস্থায় শত্রুদের মূল ঘাঁটিতে হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে প্রথম দফার হামলা শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে তাদের উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত এসব হামলা চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন নেতানিয়াহু। এক্ষেত্রে সরাসরি হামলা চালানোসহ গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। হামাসের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ এলাকাটি বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। কারণ ২০০৭ সাল থেকেই ইসরায়েল এর অধিকাংশ এলাকা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। একইসঙ্গে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের চলাচলের স্বাধীনতা এবং পণ্য সরবরাহের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে দেশটি।

এদিকে গত প্রায় দুই বছর থেকেই ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মূলত ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনের বিভিন্ন নগর ও শহরে ক্রমাগত অভিযান চালালে হামাসের সঙ্গে তাদের সহিংসতার ঘটনা ঘটে। তবে ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়াই তাদের এ অভিযানের মূল কারণ বলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

সূত্র : সিএনএন।