রাজনীতি

গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের দায়ে ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:০০, ৩ মে ২০২৪;  আপডেট: ২৩:১৩, ৩ মে ২০২৪

গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের দায়ে ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দেশদুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে 'ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয়ের' পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে তুরস্ক। ইসরাইল যতোদিন পর্যন্ত গাজায় অব্যাহতভাবে ও পর্যাপ্ত পরিমাণে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে না দেবে, ততোদিন এ স্থগিতাবস্থা বজায় থাকবে বলে জানানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

যুদ্ধবিরতি ও গাজার রাফায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে দিতে রাজি না হওয়ার ব্যাপারে ইসরাইলের অনড় অবস্থানের সমালোচনা করেছেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ওমর বোলাত।

তিনি বলেন, ‌‌'স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সহায়তা পৌঁছাতে দিতে ইসরাইল রাজি না হওয়া পর্যন্ত তুরস্ক তাদের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রাখবে।'

তবে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান 'স্বৈরশাসকের' মতো আচরণ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক বার্তায় কাটজ বলেন, 'প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কের জনগণ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে অবহেলা করছেন এবং বিদ্যমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিগুলোকে উপেক্ষা করছেন।'

ইসরায়েল কাটজ আরো বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তিনি তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্যের বিকল্প উপায় খুঁজে বের করার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বাড়াতে এবং অন্যান্য দেশ থেকেও পণ্য আমদানির জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

তবে, এরদোয়ান বরাবরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অ্যাডলফ হিটলার, বেনিতো মুসোলিনি ও জোসেফ স্টালিনের সঙ্গে তুলনা করে তাকে (নেতানিয়াহু) 'গাজার কসাই' আখ্যা দিয়েছেন।

এর বিপরীতে নেতানিয়াহু মন্তব্য করেন, 'তুরস্কের নেতা (এরদোয়ান) কোনোভাবেই ইসরাইলকে নীতিকথা শেখাতে পারেন না।'

গত মার্চে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, 'প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গণহত্যাকারী ও ধর্ষক হামাস বাহিনীকে সমর্থন করেন এবং নিজের দেশে আর্মেনিয়দের হাতে কুর্দিদের গণহত্যার কথা স্বীকার করেন না।'

এদিকে, গত কয়েক মাস ধরেই তুরস্কের পক্ষ-বিপক্ষের শক্তিগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ওপর চাপ তৈরি করে আসছিলো।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি লোহা, স্টিল, জেট ফুয়েল, কীটনাশক ও নির্মাণকাজের যন্ত্রপাতির মতো ৫৪টি পণ্য ইসরাইলে রপ্তানির ওপর বিধি-নিষেধ জারি করে তুরস্ক।

ওই বিধিনিষেধ বাড়িয়ে ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য একেবারে স্থগিত করা হয়েছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়।

গত বছর দেশদুটির মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার (৫.৬ বিলিয়ন পাউন্ড)। ২০২৩ সালে তুরস্কের ১৩তম বৃহৎ রপ্তানি বাজার ছিলো ইসরাইল। ওই বছর ইসরাইলের আমদানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় উৎস ছিলো তুরস্ক।

উল্লেখ্য, মুসলিম অধ্যুষিত প্রথম দেশ হিসেবে তুরস্ক ১৯৪৯ সালে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। তবে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দেশদুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে।

২০১০ সালে তুরস্কের ফিলিস্তিনপন্থী ১০ অধিকারকর্মীকে হত্যা করে ইসরাইল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে তুরস্ক।

২০১৬ সালে তাদের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হলেও এর দুই বছর পরই গাজা-ইসরাইল সীমান্ত নিয়ে চলমান বিরোধের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনি হত্যার প্রেক্ষাপটে দেশদুটি পরস্পরের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইসরাইলের সমালোচনার ক্ষেত্রে আরো কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

সূত্র : বিবিসি।