রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইউরোপকে এগিয়ে আসার আহ্বান যুক্তরাজ্যের
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২:৫৬, ৩ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২৩:০৬, ৩ মার্চ ২০২৫

ইউক্রেনের সমর্থনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর নেতারা একমত হয়েছেন।
ইউরোপীয় মহাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। গতকাল রবিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে একে ‘এক প্রজন্মে একবারই আসা বিশেষ মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ অবস্থায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সেনা সহায়তা ও সমর্থন দিয়ে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
স্টারমার এ বিষয়ে বলেন, ‘ইউক্রেনের অবস্থার উন্নয়নের বিষয়টির সঙ্গে এ অঞ্চলসহ বিশ্বের আরও বহু দেশের নিরাপত্তা জড়িত।’
সম্মেলনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেনের নিরাপত্তা প্রশ্নে ইউরোপেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে বলে স্টারমার উল্লেখ করেন। তবে, ইউরোপীয় মহাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও তা বজায় রাখতে এখানে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থনও প্রয়োজন বলে এ সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানান।
এদিকে, সম্মেলনে যোগ দিতে শনিবার লন্ডনে পৌঁছান জেলেনস্কি। এ সময় স্টারমার তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সামর্থ বাড়াতে ২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার চুক্তির ঘোষণা দেন। জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ থেকে প্রাপ্ত লাভ থেকে এ অর্থ ছাড় করা হয়েছে বলে জানা যায়। পাঁচ হাজারেরও বেশি আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে ইউক্রেনকে এ অর্থ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
একইসঙ্গে, শান্তি চুক্তি সফল করতে তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। যার মধ্যে - ইউক্রেনের অবস্থা জোরদারে দেশটিতে অস্ত্রের যোগান নিশ্চিত করা, দেশটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইউরোপের জোরালো সমর্থন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধের শর্ত ভঙ্গ করা রোধে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেওয়া।
এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইউরোপের দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়নের উপর জোর দেন তিনি।
শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়া জার্মানি, ডেনমার্ক, ইতালি, তুরস্ক, ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও এ সময় তার সঙ্গে একমত হন।
এ ক্ষেত্রে অস্ত্র ও অর্থের যোগান নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান জোরালো করার আহ্বান জানান ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট আর্সেলা ভন দার লিয়েন। একইসঙ্গে, ইউরোপের গণতন্ত্র রক্ষার সামর্থের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে দেখানো উচিত বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, এ সম্মেলনের পর ব্রাসেলসে আগামী বৃহস্পতিবার আরেকটি সম্মেলনের দিন ধার্য রয়েছে। সেখানে ইউক্রেনসহ পুরো ইউরোপের জন্য ইউরোপীয় কমিশন একটি প্রতিরক্ষা প্যাকেজ ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।
এ প্যাকেজের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করাসহ এ অঞ্চলের নিরাপত্তা জোরদার এবং সর্বোপরি কিয়েভের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একটি দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকর চুক্তি বাস্তবায়নের উপর জোর দেওয়া হবে।
কিন্তু, এ ক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচনার ধরন ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্রদের দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ, এ ধরনের আলোচনা কিয়েভের অবস্থানকে নড়বড়ে করবে বলে আশঙ্কা তাদের।
এ অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় সম্মত হয়েছে বলে রবিবার স্টারমার জানান।
উল্লেখ্য, এ শীর্ষ সম্মেলনের দুই দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জেলেনস্কির নির্ধারিত বৈঠক থেকে আশানুরুপ কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এমনকি, জেলেনস্কি মার্কিন সমর্থনের ব্যাপারে পর্যাপ্ত কৃতজ্ঞ নন বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প।
একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির শর্তগুলোর ব্যাপারে একমত না হওয়ায় জেলেনস্কির সমালোচনাও করেন ট্রাম্পসহ তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। এ সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জেলেনস্কির অবস্থান বিশ্বযুদ্ধ ডেকে নিয়ে আসতে পারে বলে ট্রাম্প সতর্ক করেন।
তবে, বৈঠকের উত্তপ্ত আলোচনার পরও ইউক্রেন যুক্তিসঙ্গত ও মুক্ত আলোচনার জন্য সব সময় প্রস্তুত বলে জেলেনস্কি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘কঠিন আলোচনা সত্ত্বেও আমরা কৌশলগত অংশীদার। তবে, উভয় দেশের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে আলোচনার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই সততা ও স্পষ্টতা অত্যন্ত প্রয়োজন।’
সূত্র : আল-জাজিরা।