রাজনীতি

ভারতের প্রধানন্ত্রীর রাশিয়া সফর

পুতিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক নরেন্দ্র মোদির

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ৯ জুলাই ২০২৪;  আপডেট: ২৩:২১, ৯ জুলাই ২০২৪

পুতিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক নরেন্দ্র মোদির

আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে মোদিকে নিজ বাসভবনে আন্তরিক অভিবাদন জানান পুতিন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাশিয়া সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার ক্রেমলিনে দেশটির প্রধানের সঙ্গে এ বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কসহ চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন প্রসঙ্গ উঠে আসে।

দুই দিনের এ রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল সোমবার নরেন্দ্র মোদি পুতিনের বাসভবনে যান। রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থিত নভো-গারইউভো নামের ওই বাসভবনে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নৈশভোজে অংশ নেন। এ সময় তার ‘প্রিয় বন্ধু’কে দেখে পুতিন আনন্দিত হন ও তাকে জড়িয়ে ধরে অভ্যর্থনা জানান বলে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বার্তা সংস্থা তাস জানায়।

এদিকে, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে আজ অনুষ্ঠিত বৈঠকে মোদি ভারতে অবস্থিত রাশিয়ার ম্যানুফেকচারিং খাত নিয়ে আলোচনা করেন। এটি তার দেশের তরুণদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। একইসঙ্গে, আগামী বছরগুলোতে দেশ দুটির এ বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মোদি।

তবে, মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগেই রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান ‘আপাত সুবিধাজনক কৌশলগত অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্কের’ প্রশংসা করে পুতিন। একইসঙ্গে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসাও করেন। মূলত, বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া, বিশেষত শান্তিপূর্ণভাবে ইউক্রেন সমস্যার সমাধানের উপায় খুঁজে বের করায় সচেষ্ট হওয়ায় তার প্রশংসা করেন পুতিন।

এদিকে, গতকাল ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের এক শিশু হাসপাতালে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় রাশিয়া। এ হামলায় ৩১ জন নিহত ও ১৫৪ জন আহত হয়। তাদের স্মরণে আজ দেশটিতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে ইউক্রেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান এ হামলার মধ্যেই মোদির এ সফর নানা সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ বিষয়ে বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের নেতাকে মস্কোর এতো বড় অপরাধীকে জড়িয়ে ধরতে দেখা সত্যিই অনেক হতাশার। একইসঙ্গে এটি শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের ক্ষেত্রেও অনেক বড় বাধা।

যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকেও এ সফরের বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়। এ বিষয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আশা করি ভারতসহ অন্য যেকোনো দেশ রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপনের আগে এটা নিশ্চিত করবে যে, দেশটি জাতিসংঘ সনদ, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডের অখণ্ডতাকে শ্রদ্ধা করবে ও মেনে চলবে।’

তবে, বৈঠক চলাকালেই গণমাধ্যমে দেওয়া এক বক্তব্যে এ হামলার বিষয়ে কথা বলেন মোদি। এ সংঘাতে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা মেনে নেওয়া কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, ইউক্রেনে চলমান সংঘাতের সমাধান যুদ্ধের ময়দানে করা সম্ভব নয়। এজন্য আলোচনার মধ্য দিয়ে এর একটি শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজে বের করতে হবে বলে মোদি মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক অনেক পুরানো। স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়। তবে, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর এবারই প্রথম রাশিয়া সফরে গেলো ভারতের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান।

এদিকে, এবারের রাশিয়া সফরে মোদি ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের মুক্ত করার বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিবেন বলে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র জানায়। একইসঙ্গে, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভারসাম্যহীনতা নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানানো হয়। বর্তমানে ভারত এর ব্যবহার্য অস্ত্রের ৬০ শতাংশ এবং তেলের ৪০ শতাংশ রাশিয়া থেকে কিনে থাকে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে, সিএনএন।