রাজনীতি

সংঘাতের পর কসোভোয় ন্যাটোর সেনা মোতায়েন

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ৩০ মে ২০২৩;  আপডেট: ০৯:০১, ৩১ মে ২০২৩

সংঘাতের পর কসোভোয় ন্যাটোর সেনা মোতায়েন

ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনীর সেনাদের সঙ্গে গতকাল সোমবার আন্দোলনরত সার্বদের সংঘর্ষ বাঁধে।

আন্দোলনরত সার্ব নাগরিকদের সঙ্গে গতকাল সোমবার সংঘাতের পর কসোভোর স্ভেচান শহরে সেনা মোতায়েন করেছে ন্যাটো। সোমবার ন্যাটোভুক্ত কসোভো সেনাদের সঙ্গে দেশটিতে আন্দোলনরত সার্বদের সংঘাতের পর এখনও সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার সেখানে ন্যাটোর সেনা মোতায়েন করে কসোভো।

সোমবার সংঘাতের ঘটনায় ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন ৩০ সেনাসদস্য আহত হয়। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচ বলেন, এতে অন্তত ৫২ জন সার্ব নাগরিক আহত হয় যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।

নির্বাচনের পর মোতায়েন করা কসোভো পুলিশ সদস্যদের তুলে নেওয়া এবং স্থানীয় মেয়রদের অপসারণের দাবিতে সোমবার স্ভেচান পৌর টাউন হলের সামনে জড়ো হয় স্থানীয় সার্ব নাগরিকরা। তারা জোর করে হলে ঢুকতে চাইলে সেখানে অবস্থানরত ন্যাটোর শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্য কসোভোর সেনারা (ন্যাটো-লিড কসোভো ফোর্স বা কে-ফোর) আন্দোলনকারীদের দমনে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।

সংঘর্ষের একদিন পর আজও সেখানে অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। টাউন হলের সামনে এখনও আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছে। এ কারণে আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন কসোভো সেনাদের সশস্ত্র একটি দলকে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাদের বাধার কারণে আন্দোলনকারীরা হলের ভেতরে ঢুকতে না পেরে বাইরেই অবস্থান নিয়েছে।

মূলত গত মাসে কসোভোয় অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে ঘিরেই এ সংঘাতের শুরু। কারণ দেশটির উত্তরের অন্তত তিনটি শহরে সার্বরা নির্বাচন বয়কট করে যেখানে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে স্থানীয় আলবেনিয়দের মধ্যে থেকে ওইসব স্থানে মেয়র নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পরই ওইসব এলাকার সার্বরা জানায়, আলবেনিয় মেয়ররা কখনোই তাদের প্রকৃত প্রতিনিধি নয়।

এরপর স্থানীয়ভাবে মোতায়েন করা পুলিশ তুলে নিতে এবং নবনিযুক্ত মেয়রদের অপসারণ দাবিতে স্থানীয় সার্বরা কসোভোর স্ভেচান শহরে ঢুকতে শুরু করে। পরে সোমবার টাউন হলের ভেতরে ঢুকতে চেষ্টা করলে সেখানে সংঘাত হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও অবস্থা এখনও শান্ত নয় বলে মঙ্গলবার কসোভো পুলিশ জানায়।

এদিকে কসোভোকে অশান্ত করার জন্য দেশটি সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে কসোভোর সার্ব অধ্যুষিত এলাকায় আলবেনিয় মেয়র নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় কসোভো সরকারকে দোষারোপ করছেন সার্ব প্রেসিডেন্ট ভুচিচ। এ ছাড়া এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলোও কসোভো সরকাররে তীব্র নিন্দা করে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে কসোভো সার্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু দেশটির সার্ব অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা এখন পর্যন্ত কসোভোর এ স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি এবং এখনও তারা বেলগ্রেডকেই তাদের রাজধানী মনে করে।

এদিকে কসোভোয় বসবাসকারী নিপীড়িত আলবেনিয়রা সার্ব শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার দুই দশক পরও সার্বিয়াসহ দেশটির মিত্র দেশ চীন ও রাশিয়াও এখন পর্যন্ত কসোভোকে স্বীকৃতি দেয়নি।

অন্যদিকে, বর্তমানে স্বাধীন রাষ্ট্র কসোভার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই মূলত স্থানীয় আলবেনিয়। কিন্তু দেশটির উত্তরাঞ্চলের সার্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার বাসিন্দারা বহুদিন থেকেই ইইউর (ইউরোপিয় ইউনিয়ন) মধ্যস্থতায় সম্পাদিত ২০১৩ সালের চুক্তির আওতায় এসব এলাকায় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান ও ডেইলি সাবাহ।