সীমান্তে উত্তেজনা কমিয়ে আনার বিষয়ে একমত চীন-ভারত
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২:১৪, ২১ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ২২:২৭, ২১ অক্টোবর ২০২৪
গালওয়ান উপত্যকায় ২০২০ সালের সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় ও ৪ চীনা সেনা নিহত হয়। ছবি : ডয়চে ভেলে।
চীন ও ভারতের মধ্যেকার যৌথ সীমান্ত এলাকায় বিদ্যমান উত্তেজনা কমিয়ে আনার বিষয়ে একমত হয়েছে দেশ দুটি। হিমালয়ের বিরোধপূর্ণ একটি সীমান্ত এলাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশ দুটির মধ্যে সংঘর্ষ চরম পর্যায়ে পৌঁছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে চীন ও ভারতের তরফ থেকে এ সমঝোতা হয় বলে ভারতের উচ্চপদস্থ এক কূটনীতিক জানান।
কূটনৈতিক বিক্রম মিস্রি আজ সোমবার জানান যে, বিরোধপূর্ণ ওই সীমান্ত এলাকায় দেশ দুটি আর কোনো সংঘাতে না জড়ানো এবং ২০২০ সালে এই এলাকা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
এক্ষেত্রে, কূটনীতিক মিস্রি মূলত চীন ও ভারতের যৌথ সীমান্ত এলাকা গালওয়ান উপত্যকায় সৃষ্ট সংঘাতের উল্লেখ করেছেন। ১৯৭৫ সালের পর ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো এ এলাকা নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এর পর থেকে দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
মিস্রি এ বিষয়ে বলেন, ‘ভারত-চীন সীমান্তের লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) এলাকায় সীমান্ত রক্ষীদের পাহারার বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে, এ এলাকা নিয়ে ২০২০ সালে সৃষ্ট উত্তেজনা কমিয়ে আনা ও সমস্যা সমাধানের বিষয়ে দুই পক্ষই একমত হয়েছে।’
তবে, এক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে কিভাবে বিদ্যমান উত্তেজনা কমিয়ে আনা হবে এবং বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকা বিষয়ে কি ধরনের সমাধান হবে, সেসব বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
তবে, গালওয়ান এলাকায় সংঘর্ষের মতো ঘটনার পর পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে এ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোই অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ, এ বিরোধ সমাধানের উদ্দেশ্যে গত চার বছরে দুই দেশের শীর্ষ স্থানীয় কূটনীতিক ও সেনা প্রধানদের মধ্যে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়। কিন্তু, প্রতিবারই এসব বৈঠক ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় এবারই প্রথম দেশ দুটি এ সংক্রান্ত কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে সক্ষম হলো।
এদিকে, এমন এক সময় চীন ও ভারত এ সমঝোতা করলো যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে রাশিয়া সফরে রয়েছেন। তবে, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত এ ব্রিকস সংক্রান্ত সম্মেলনে মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে দ্বিপাক্ষিক কোনো বৈঠক করবেন কিনা, ভারতীয় কূটনীতিক বিক্রম মিস্রি তা নিশ্চিত করেননি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পন্ন সমঝোতা অনুযায়ী সীমান্তের কাছে দুই পক্ষের সেনা সদস্যদের বন্দুক ও বোমা নিয়ে সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ফলে, ২০২০ সালে গালওয়ান সীমান্তে দেশ দুটির বাহিনী একে অন্যের সঙ্গে মুগুর ও লাঠি নিয়ে সংঘাতে জড়ায়।
এছাড়াও , চীন ও ভারতের সেনাবাহিনী ২০২১ সালে উত্তর সিকিমের সীমান্ত এলাকা ও পরবর্তীতে ২০২২ সালে সীমান্তের তাওয়াং অংশে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
মূলত, ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ যৌথ সীমান্ত এলাকার মধ্যে নদী, হ্রদ ও বরফ আচ্ছাদিত পাহাড়ি এলাকা রয়েছে। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে এখানকার সীমান্ত লাইন প্রায়ই পরিবর্তিত হয়। এ কারণে, দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীরাও প্রায়ই মুখোমুখি হয়ে যায়, যা থেকে সৃষ্ট উত্তেজনা এক সময় সংঘাতে রূপ নেয়।
এছাড়া, উভয় পক্ষই সীমান্ত এলাকায় অব্যাহতভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। এটিও দেশ দুটির মধ্যে সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনা বেড়ে চলার আরেকটি বড় কারণ। আর, সীমান্ত নিয়ে বিদ্যমান এ উত্তেজনার প্রভাব পড়ে চীন ও ভারতের মতো বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশ দুটির আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রেও ।
সূত্র : সিএনএন।