প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে কর-পরিকল্পনা বাতিল করলো কেনিয়া সরকার
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৬ জুন ২০২৪; আপডেট: ২৩:১৯, ২৬ জুন ২০২৪
২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর এবারই প্রথম জনগণের এতো বড় বিক্ষোভের মুখে পড়লেন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রোটো।
কেনিয়ার সরকার বিতর্কিত একটি অর্থ-সংক্রান্ত আইনের খসড়া বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন এ খসড়াটি আইন আকারে বাস্তবায়িত হলে জনগণের করের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ফলে, এর বিরুদ্ধে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু করে জনগণ।
এর এক পর্যায়ে গতকাল মঙ্গলবার কেনিয়ার পার্লামেন্ট ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার আইনের খসড়াটি বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দেশটির প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রোটো।
টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে এ সম্পর্কে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন যে, এটা পরিষ্কার কেনিয়ার জনগণ এ খসড়াটি আইন আকারে পাশ হোক, তা চাইছে না। ‘আমি এ বিষয়ে সবার সঙ্গে পূর্ণ সম্মতি জানাচ্ছি’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন যে, তিনি আইনের এ খসড়ায় স্বাক্ষর করবেন না।
একইসঙ্গে তিনি এ বিষয়ে এখন দেশের তরুণ জনগণের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী বলে জানান। রোটো বলেন, ‘আমি কেনিয়ার জনগণের কথা ধৈর্য নিয়ে শুনেছি। তারা এ খসড়াটি আইন আকারে পাশ হোক, তা চায় না। তাই আমিও অর্থ-আইন ২০২৪ এ স্বাক্ষর না করে এটি বাতিল বলে ঘোষণা করছি। জনগণ তাদের রায় দিয়েছে।’
তবে, দেশব্যাপী বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখেই গতকাল জাতীয় পার্লামেন্টে খসড়াটি পাশ হয়। এর পর পরই বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট চত্ত্বর এলাকায় প্রবেশ করে সেখানে ব্যাপক ভাঙ্গচুর চালায়। এক পর্যায়ে তারা এর একাংশে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ অবস্থায় প্রথমদিকে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে এ বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ‘কোনো ধরনের সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলাকে’ প্রশ্রয় দেওয়া হবে না উল্লেখ করে, বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন তিনি।
বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের পর দু’পক্ষের সংঘর্ষে গতকাল কমপক্ষে ২২ জন প্রতিবাদকারী নিহত হয় বলে জানায় কেনিয়ার মানবাধিকার সংক্রান্ত জাতীয় কমিশন (কেএনএইচআরসি)। নিহতের এ ঘটনার পর প্রতিবাদকারীদের মধ্যে বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কেনিয়ার সরকারকে সংযত আচরণ এবং বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস।
এদিকে, গত সপ্তাহে চলমান বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে এক দফা ওই খসড়াটির বিতর্কিত অনেক প্রস্তাবে কাটছাঁট করে সরকার। তারপরও পুরো খসড়াটি বাতিলের দাবিতে চলতি সপ্তাহজুড়েই বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে কেনিয়ার জনগণ। শেষ পর্যন্ত তাদের এ দাবির প্রতি সম্মতি জানিয়ে খসড়াটি পুরোপুরিই বাতিল বলে ঘোষণা করে দেশটি।
উল্লেখ্য, আইনের মূল খসড়াটিতে রুটি, ভোজ্যতেল, মোবাইল সেবা, বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং যন্ত্রচালিত যানবাহনের উপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু, এটি বাস্তবায়িত হলে কেনিয়ায় এরইমধ্যে বেড়ে চলা জীবনযাপন ব্যয় অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কা দেখা দেয়। এ কারণেই এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে দেশটির হাজার হাজার মানুষ।
সূত্র : বিবিসি।