আফগানিস্তানের নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘নীরব সাহসিকতা’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২১:৩৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩; আপডেট: ২২:৫২, ২৭ অক্টোবর ২০২৩
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের কুনার প্রদেশ। এখানকার সোওয়াকি জেলার একটি হাসপাতালে টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী।
কয়েক দশকের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, খরা এবং অন্যান্য নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত আফগানিস্তান বর্তমানে ব্যাপকভাবে মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে।
প্রতিদিন দেশটির লাখ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের মুখোমুখি হচ্ছে, যাদের জীবন বাঁচানোর মতো প্রয়োজনীয় খাবার এবং স্বাস্থ্যসেবার পর্যাপ্ত কোনো সুযোগ এখানে নেই। আর এ সংকট তাদেরকে একইসঙ্গে পুষ্টিহীনতা ও নানা ধরনের রোগের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে দেশটির নারী ও কন্যাশিশুরা। স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা এমনকি চলার স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও পদে পদে বাধা তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
তবে চলমান এ সংকটের মধ্যেই আফগানিস্তানের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা দুর্দশাগ্রস্ত এসব মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছেন। যদিও এক্ষেত্রে প্রতিদিনই নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে এ খাতে কাজ করা দেশটির হাজারো নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের। কিন্তু সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দেশটির লাখ লাখ জনগণকে।
বর্তমানে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের সহযোগিতায় আফগানিস্তানে ২৭ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, যার মধ্যে ১০ হাজারই নারী কর্মী।
তাদের সম্পর্কে দেশটিতে ইউনিসেফের স্বাস্থ্যখাতের প্রধান ডাক্তার ফৌজিয়া শফিক বলেন, ‘আফগানিস্তানের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও নীরব সাহসিকতা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় বর্তমানে দেশটির ২ কোটি জনগণ চলতি বছরের প্রথমভাগে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা পেয়েছে। এ সংখ্যা আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।’
তবে শুধু আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা নয় বরং দেশের পুরো জাতিকে সঠিক স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আনতে আফগানিস্তানে একটি কার্যকর ও স্থিতিশীল স্বাস্থ্যসেবা খাত গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা।
এখানে আফগানিস্তানের নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিদিনকার কর্ম পরিস্থিতির কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো :
মধ্য আফগানিস্তানের ওয়ারডাক প্রাদেশিক হাসপাতালে এক শিশুকে পানিবাহিত ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী। যথাসময়ে চিকিৎসা না নিলে সামান্য এ রোগই হতে পারে প্রাণঘাতী। অতিরিক্ত গরম ও সুপেয় পানির অভাবে দেশটিতে ডায়রিয়াসহ এ ধরনের আরও নানা রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের বালখ প্রদেশের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এখানে একজন ধাত্রী এক রোগীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। বর্তমানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে দক্ষ ধাত্রী নিয়োগ দেওয়ার কারণে অনেক আফগান নারীই এখন সন্তান প্রসব সংক্রান্ত নানা পরামর্শ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ প্রসবের জন্য কেন্দ্রগুলোতে আসতে উৎসাহী হচ্ছে। যেখানে আগে অধিকাংশ প্রসবের ঘটনা বাড়িতেই ঘটতো।
আফগানিস্তানে ইউনিসেফের মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে গড়ে ওঠা এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে নারী কর্মীদের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। কারণ দেশটির জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের সেবা নিশ্চিন্তে তাদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে শিশু, নারী, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যারা মূলত আগে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পেতো না, তাদের এ সেবা নিশ্চিন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন এ কর্মীরা।
ফাতেমা আদেলি ইউনিসেফ সমর্থিত ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টি দলের (এমএইচএনটি) একজন চিকিৎসক। এখানে তিনি এ সেবার অংশ হিসেবে আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলের দাইকুন্দি প্রদেশের নিলি জেলায় রোগীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। এমএইচএনটি পরিষেবার আওতায় এ দলের সদস্যরা প্রতি মাসে একবার দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে - মাতৃত্ব, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি।
আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের হেরাত প্রদেশের কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী রহিমা করিমি। এখানে তিনি নয় মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা ঘুনচা গুলকে দেখতে তার বাড়ি গিয়েছেন। ঘুনচা অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়ার পর প্রতি মাসেই একবার বাড়িতে গিয়ে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছেন রহিমা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অন্তঃস্বত্ত্বা অবস্থায় কমপক্ষে চারবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার গুরুত্ব এসব নারীদের বোঝাতে আমি তাদের বাড়ি গিয়ে থাকি। একইসঙ্গে তারা যেন কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে প্রসব করান, সে ব্যাপারেও তাদের উৎসাহ দিয়ে থাকি। অনেক নারীকে আমি প্রসবকালীন জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছি। আমি তাদের সাহায্য করতে চাই। এ কারণেই আমি এ পেশা বেছে নিয়েছি।’
সূত্র : আল-জাজিরা।