বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২
ছবিতে আর্জেন্টিনা - ফ্রান্সের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফাইনালের স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত
খেলাধুলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ২০ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ০০:২০, ২১ ডিসেম্বর ২০২২
মেসিদের জয়োৎসব...
কাতারে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ এর এবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে এবার তৃতীয়বারের মতো এ সফলতা অর্জন করলো দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটি। পুরো ৯০ মিনিটসহ আরও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে ৩-৩ গোলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শুটআউটে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে পরাজিত করতে সক্ষম হয় ফুটবলপ্রেমীদের দেশ আর্জেন্টিনা।
প্রচন্ড উত্তেজনাকর এ ফাইনাল ম্যাচটিতে বিশ্বখ্যাত তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি নিজে করেছেন দুটি গোল এবং আরেকটি করেন দলটির আরেক খেলোয়াড় অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। অন্যদিকে ১৯৯৬ সালের পর এবারই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে গোলের হাটট্রিক করেছেন ফ্রান্সের আরেক তারকা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাম্পে। তবে শেষ পর্যন্ত কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ১৮ ডিসেম্বরের শ্বাসরুদ্ধকর এ ফাইনালের পর্দা নামে আর্জেন্টিনার জয়ের মধ্য দিয়েই। একইসঙ্গে প্রচন্ড উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে দলের সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে বহুল কাঙ্খিত সেই স্বর্ণের ট্রফি উচিয়ে ধরে বাঁধভাঙ্গা আনন্দের মধ্য দিয়েই নিজের গৌরবোজ্জ্বল ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানেন বিশ্বসেরার তকমা পাওয়া আর্জেন্টিনার খেলোয়ার মেসি।
স্মরণকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেই ফাইনালের কিছু স্মরণীয় ছবি :
মাত্র এক মাসের মধ্যে ৬৩টি ম্যাচের পর শেষ পর্যন্ত ফাইনাল হয় আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের মধ্যে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে। এখানে ম্যাচ শুরুর আগের শেষ উদযাপন...
খেলার শুরুতেই আর্জেন্টিনা ছিলো আক্রমণাত্মক এবং এ অবস্থাতেই মাত্র ২৩ মিনিটের মাথায় তারা একটি পেনাল্টির সুযোগ পায়। আর কোনোভাবেই এ সুযোগ হাতছাড়া না করে দল এবং ম্যাচের প্রথম গোলটি করেন দেন লিওনেল মেসি...
পরে খেলার প্রথমার্ধেই ম্যাচের এবং নিজ দলের দ্বিতীয় গোলটি করেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় ডি মারিয়া। নৈপুন্যপূর্ণ এক কাউন্টার অ্যাটাকের মাধ্যমে দেওয়া এ গোলের পর মনে হচ্ছিলো আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে...
কিন্তু খেলার ৬৭ মিনিটের মাথায়ও কোনো গোল দিতে না পারায় যেখানে ফ্রান্সের হার একরকম নিশ্চিত মনে হচ্ছিলো, সে সময়ই আর্জেন্টিনার এক ফাউলের মাধ্যমে পেনাল্টির সুযোগ পায় ফ্রান্স। আর স্বাভাবিকভাবেই সে সুযোগ হাতছাড়া করেননি দলের দক্ষ খেলোয়াড় কিলিয়ান এমবাপ্পে। নিখুঁত দক্ষতায় বলটি আর্জেন্টিনার জালে ঢুকিয়ে শিবিরে প্রাণের সঞ্চার করেন তিনি...
আর এ গোলের মধ্য দিয়ে ফ্রান্স শিবিরে ফিরে আসা উদ্দম উচ্ছ্বাসে পরিণত হয় মাত্র ৯৭ সেকেন্ডের মাথায়, যখন এই এমবাপ্পেই দলের জন্য দ্বিতীয় গোলটি করে ২-২ এ ম্যাচের সমতা ফিরিয়ে আনেন...
তবে এ অবস্থায় খেলার বাকি সময় দুই দলের মধ্যে জোর লড়াই হলেও কোনো দলই আর এ টাই ভাঙ্গতে না পারায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তবে এবার আর হতাশ না করে আর্জেন্টিনার জন্য আরেকটি আনন্দের উপলক্ষ্য নিয়ে আসেন মেসি ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ও দলের জন্য তৃতীয় গোলটি করে...
কিন্তু, তখনও বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য অপেক্ষা করছিলো আরও চমক! কারণ, আর্জেন্টিনার একটি হ্যান্ডবলের কারণে আবারও পেনাল্টির সুযোগ পেয়ে যায় ফ্রান্স এবং এবারও এ সুযোগ হাতছাড়া না করে বরং আবারও ৩-৩ এ ম্যাচের সমতা ফিরিয়ে আনেন এমবাপ্পে...
...এবং এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে গোলের হ্যাটট্রিকও করেন তিনি। এভাবে মোট ১২০ মিনিটের খেলায় তিনটি পেনাল্টির পর শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে টাইব্রেকারে গড়ায় এরইমধ্যে 'অবিশ্বাস্য' তকমা পাওয়া এ বিশ্বকাপ ফাইনাল...
টাইব্রেকারের শুরুতে স্বাভাবিকভাবেই যার যার দলের জন্য প্রথম পেনাল্টিতেই গোল এনে দেন মেসি এবং এমবাম্পে। তবে ফ্রান্সের কিংসলে কোম্যানের দ্বিতীয় পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টিনার 'বাজপাখি' খ্যাত গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ...
জালের অনেকটাই বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় তৃতীয় পেনাল্টি শুটআউটও ব্যর্থ হয় ফ্রান্সের, যদিও এরই মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় উভয় পেনাল্টিতেই বল জালের মধ্যে ঢোকাতে সক্ষম হন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা...
এ অবস্থায় ফ্রান্স পর পর দুটি পেনাল্টি দিতে ব্যর্থ হলেও চতুর্থ শটে গোল করতে সক্ষম হয়। ৩-২ এ এগিয়ে থেকে দলের জন্য চার নম্বর পেনাল্টি শট দিতে আসেন শেষ মুহূর্তের বদলি খেলোয়াড় আর্জেন্টিনার গোঞ্জালো মন্টিয়েল। আর তাকে নামানো যে ভুল হয়নি, ফ্রান্সের গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জয়সূচক গোলটি করার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ করেন তিনি। তখন খেলার ফলাফল -আর্জেন্টিনা ৪ - ফ্রান্স ২ ...
দলের জন্য অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেওয়ার পর নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি মন্টিয়েল। জার্সি দিয়ে মুখ ঢেকে আনন্দের কান্না কাঁদছিলেন তিনি, এরইমধ্যে উচ্ছ্বসিত সতীর্থরা ঘিরে ধরেন তাকে...
জমজমাট এক লড়াইয়ের পর শেষ হাসিটা আর্জেন্টিনার। ম্যাচসেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বর্ণের বলটিও দখলে নেন মেসি। যদিও স্বাভাবিকভাবেই তার মন পরে ছিলো বহুল কাঙ্খিত সোনার এ ট্রফিটির দিকেই...
বিজয়ের উল্লাস! ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালের পর এটি আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়। দেশটির কিংবদন্তি খেলোয়াড় ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর প্রায় দুই বছর পর এ সফলতা পেলো দলটি। এর আগের দুই বিশ্বকাপ বিজয়ে যার অবদান ছিলো সবেচেয়ে বেশি...
রবিবার রাতে মেসি ছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ শিখরে।
সূত্র : বিবিসি ।