অন্যান্য

যুক্তরাষ্ট্রে মাঝ আকাশে উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ

সব যাত্রী নিহতের আশঙ্কা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:৪২, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫;  আপডেট: ০১:১৩, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে মাঝ আকাশে উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ

বৃহস্পতিবার সকালে পটোমাক নদীতে উদ্ধারকারী নৌকার তৎপরতা।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সংঘটিত উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় যাত্রীদের কেউ বেঁচে নেই বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসির অগ্নি ও জরুরি চিকিৎসা সেবা কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়।

গতকাল বুধবার রাতে রোনাল্ড রিগ্যান ওয়াশিংটন জাতীয় বিমানবন্দরের কাছে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মার্কিন কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (এফএএ) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। মাঝ আকাশে একটি সেনা হেলিকপ্টারের সঙ্গে যাত্রীবাহী ওই উড়োজাহাজের সংঘর্ষের পর দুটি যানই ওয়াশিংটন ডিসির পটোমাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়।

স্থানীয় সময় রাত নয়টায় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনাকারী এ উড়োজাহাজটির রিগ্যান বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ধার্য ছিলো বলে এফএএ এক বিবৃতিতে জানায়। এটি কানসাস থেকে যাত্রা করেছিলো বলেও জানানো হয়।

দুর্ঘটনার সময় পিএসএ এয়ারলাইনসের ওই ফ্লাইটিতে ৬৪ জন যাত্রী ছিলো বলে জানা যায়। এদের মধ্যে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিগার স্কেটিং কমিউনিটির সদস্য বলে এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়।

এছাড়া, উড়োজাহাজটিতে রাশিয়ার দু’জন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফিগার স্কেটার ছিলো বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে, দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি ছিলো সামরিক বাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার। সে সময় এতে তিন সেনা সদস্য ছিলো বলে জানানো হয়।

তবে, বর্তমানে দুটি যানের কোনো যাত্রীই বেঁচে নেই বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। ফলে, বর্তমানে নদী থেকে সব মরদেহ উদ্ধারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে ওয়াশিংটন ডিসির অগ্নি ও জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রধান জন ডোনেলি জানান।

আজ সকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা বর্তমানে তাদের মরদেহ উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ, এ অবস্থায় এখন আর কারও বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

এরইমধ্যে উড়োজাহাজটির বিধ্বস্ত অংশ থেকে ২৭ জন এবং হেলিকপ্টার থেকে এক সেনা সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ডোনেলি নিশ্চিত করেন।

উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে মরদেহ উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ দুর্ঘটনার জন্য সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারকে দায়ী করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ বিষয়ে ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘উড়োজাহাজটি সঠিক পথে থেকেই বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য প্রস্তুত ছিলো। কিন্তু, হেলিকপ্টারটি সরাসরি উড়োজাহাজটির পথে যেতে শুরু করে। ঘটনার সময় রাতের আকাশ পরিষ্কার ছিলো, উড়োজাহাজের আলোগুলোও ঠিকমতো জ্বলছিলো; তারপরও কেন হেলিকপ্টারটি সময়মতো উপর-নিচে সরে গেলো না বা অন্য পথে ঘুরে গেলো না। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেও হেলিকপ্টারটিকে সঠিক দিক নির্দেশনা না দিয়ে কেন শুধু এটা জানতে চাওয়া হলো যে, উড়োজাহাজটি দেখতে পেয়েছে কিনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক একটি ব্যাপার। কারণ, পুরো বিষয়টি দেখে মনে হচ্ছে যে এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো। বিষয়টি মোটেও ভালো হয়নি।’

এর কিছুক্ষণ পরেই আরও একটি বার্তায় প্রেসিডেন্ট লিখেন, ‘কি দুর্বিষহ একটি রাত গেলো। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে রক্ষা করুন।’

পিএস এয়ারলাইনসও এ দুর্ঘটনার জন্য  হেলিকপ্টারটিকে দায়ী করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে এয়ারলাইনসটির সিইও রবার্ট সোম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা জানি না কেন সেনা হেলিকপ্টারটি উড়োজাহাজটির চলাচল পথে চলে এসেছিলো। তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই এ দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানা সম্ভব হবে; কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কি এটা বলতে পারি না যে এ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিলো?’

এদিকে, পটোমাক নদীর তিনটি স্থানে উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে বলে পরিবহনমন্ত্রী সেন ডাফি জানিয়েছেন। ধ্বংসাবশেষগুলো কোমর সমান পানিতে ভাসমান এবং বর্তমানে এগুলো উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে ডাফি জানান।

তিনি বলেন, ‘উদ্ধার কাজ শেষ হলেই আমরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় উড়োজাহাজের বিধ্বস্ত অংশগুলোর প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ করবো। যতো দ্রুত সম্ভব মার্কিন নাগরিকদের এ দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানাতে পারবো বলে আশা করি।’

এদিকে, দুর্ঘটনার পর পর গতকাল রাতে রিগ্যান জাতীয় বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে, আজ স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় আবার তা চালু হয়।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ কোনো উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা। এর আগে ২০০১ সালের ১২ নভেম্বর নিউ ইয়র্কে মার্কিন এয়ারলাইনসের আরেকটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে এতে থাকা ২৬০ জনের সবাই নিহত হয়।

সূত্র : সিএনএন, ডয়চে ভেলে।