তুরস্কের স্কি রিসোর্টের হোটেলে আগুন
নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

হোটেলের অবস্থান খাড়া পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা কর্মীদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
তুরস্কের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের একটি স্কি রিসোর্টে লাগা আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। রিসোর্টটির একটি রেস্টুরেন্টে লাগা এ আগুনে আরও ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোর প্রায় সাড়ে তিনটায় এ ঘটনা ঘটে।
ইস্তাবুল থেকে ৩০০ কিলোমিটার পূর্বে ও রাজধানী আঙ্কারা থেকে ১৭০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে কুরুগলু নামের পাহাড়ের চূড়ায় তুরস্কের জনপ্রিয় এ রিসোর্টটি অবস্থিত। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত কার্তালকায়া নামের এ রিসোর্টটির কার্তাল নামের ১২তলা একটি হোটেলের রেস্টুরেন্টে আগুন লাগার এ ঘটনা ঘটে।
অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে যান তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ার্লিকায়া। এ সময় এ দুর্ঘটনায় তিনি মর্মাহত উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এদিকে, টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে হোটেলের সবচেয়ে উঁচু তলার কক্ষসহ ছাদে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এতে, আকাশে ধোঁয়ার বিশাল কুন্ডলি তৈরি হয় বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে।
তবে, অগ্নিকাণ্ডের পর পরই দমকল বাহিনীর ৩০টি ট্রাক ও ২৮টি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়। কিন্তু, হোটেলের অবস্থান খাড়া পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা কর্মীদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ অবস্থায় বাড়তি সতর্কতা হিসেবে আশেপাশের অন্যান্য হোটেলগুলো খালি করে দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে, হোটেলগুলোতে থাকা অতিথিদের নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।
১৬১টি কক্ষবিশিষ্ট হোটেলটি মূলত কাঠের অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এটি আগুন ছড়িয়ে পড়তে ভূমিকা রেখেছে বলে তুরস্কে বেসরকারি গণমাধ্যম এনটিভির প্রতিবেদকরা ধারণা করছেন।
তবে, আগুন লাগার সঠিক কারণ জানতে ছয় আইনজীবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে তুরস্কের বিচারমন্ত্রী ইলমাজ থুঞ্চ জানান।
এদিকে, আগুন লাগার পর রিসোর্টে থাকা অতিথিদের মধ্যে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েন। সে সময়ও অনেকের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়। এছাড়া, অনেকে তাদের হোটেল কক্ষের বিছানার চাদর ও কম্বল ব্যবহার করে নিচে নেমে আসার চেষ্টা করেন বলেও জানা যায়।
হোটেলের একজন স্কি প্রশিক্ষক প্রায় ২০ জনকে ভবনটি থেকে বের হতে সাহায্য করেছেন বলে এনটিভিকে জানান। তবে, প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে ‘ফায়ার এস্কেপ’ খুঁজে পেতে সমস্যা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ সময় ওই গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি আমার কিছু শিক্ষার্থীকে খুঁজে পাইনি। আশা করি তারা নিরাপদে আছেন।’
এদিকে, সময়মতো হোটেলটির ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠেনি বলে অনেক অতিথি অভিযোগ করেছেন। একইসঙ্গে, দমকল বাহিনীর গাড়িও দুর্ঘটনার এক ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় বলে দাবি করেন তারা।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আইএইচএকে অ্যাটাকান ইয়েলকোভান নামের এক অতিথি বলেন, ‘আমার স্ত্রী প্রথমে পোড়া গন্ধ পায়। কিন্তু, সে সময় কোনো সতর্কতা অ্যালার্ম বাজেনি। আমরা তখন উপরে যেতে চাইলেও ধোঁয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে আমরা নিচে নেমে যাই এবং হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপরের তলায় থাকা অতিথিরা সে সময় আতঙ্কে চিৎকার করছিলো। তারা বিছানার চাদর ধরে নেমে আসার চেষ্টা করছিলো...অনেকে লাফিয়ে নামার চেষ্টা করে।’
উল্লেখ্য, স্থানীয় বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় হোটেলের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কক্ষই পরিপূর্ণ ছিলো। বর্তমানে হোটেলটিতে ২৩০জন অতিথি অবস্থান করছিলেন বলে জানা যায়।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।