অন্যান্য

ঘূর্ণিঝড় ট্রামির প্রভাব

ফিলিপাইনে বন্যা ও ভূমিধসে কমপক্ষে ১২৬ জন নিহত ও নিখোঁজ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ২৭ অক্টোবর ২০২৪;  আপডেট: ২২:৩৫, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

ফিলিপাইনে বন্যা ও ভূমিধসে কমপক্ষে ১২৬ জন নিহত ও নিখোঁজ

ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্থ একটি এলাকায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে উদ্ধারকর্মীদের তৎপরতা।

ফিলিপাইনে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে এ পর্যন্ত নিহত ও নিখোঁজের সংখ্যা ১২৬ জনে দাঁড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে আঘাত হানা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ট্রামির প্রভাবে এ দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বর্তমানে অনেক এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় আটকে পড়া বহু বাসিন্দাকে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস এসব কথা জানান।

গত শুক্রবার ঘূর্ণিঝড়টি ফিলিপাইনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল অতিক্রম করে। সে সময় তাৎক্ষণিকভাবে কমপক্ষে ৮৫ জন নিহত ও আরও প্রায় ৪১ জন নিখোঁজ হয়।

এই ঘূর্ণিঝড় দেশটিতে এখনও পর্যন্ত এ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ ও বিধ্বংসী বলে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানায়। ফলে, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এলাকাগুলো থেকে আরও মৃত্যু ও নিখোঁজের খবর আসতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যা ও ভূমিধসে মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা মৃতদেহ বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ থেকে শুরু করে অগ্নিনির্বাপক কর্মী ও অন্যান্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা।

এদিকে, গতকাল ঘূর্ণিঝড় ট্রামির আঘাতে বিপর্যস্ত একটি এলাকা পরিদর্শনে যান ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ২৪ ঘণ্টায় এক থেকে দুই মাসের সমপরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং এর ফলে সৃষ্টি হওয়া ভয়াবহ বন্যার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পানির পরিমাণ অস্বাভাবিক রকম বেশি। তবে, আমাদের উদ্ধার কাজ এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু, বন্যার কারণে আমরা এখনও অনেক জায়গায় যেতে পারছি না।’

ফিলিপাইনের একটি প্রদেশে সৃষ্ট ভূমিধসে বিধ্বস্থ বাড়িঘর।

তবে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অস্বাভাবিক এ আবহাওয়া এবং বন্যা প্রতিরোধে তার সরকার বড় প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বলে এ সময় প্রেসিডেন্ট মার্কোস জানান।

ফিলিপাইনের ৫০ লাখ মানুষের উপর এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ৬ হাজার ৩০০ এরও বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে বাধ্য হয়। গত শুক্রবার দেশটির সরকার টানা তৃতীয় দিনের মতো সব বিদ্যালয় ও সরকারি কার্যালয় বন্ধ রাখে। এছাড়া, দেশের ভেতরে চলাচল করা বিভিন্ন ফেরিও বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে, গতকাল থেকে ফিলিপাইনের আবহাওয়া পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে থাকে। ফলে, বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধারকর্মীদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়।

কিন্তু, চলতি বছর ফিলিপাইনে আঘাত করা ১১তম এ ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ চীন সাগরে বাতাসের উচ্চ চাপের কারণে আবার দেশটিতে ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির জরুরি সংসদীয় বৈঠকে এ বিষয়ে সরকারের দুশ্চিন্তার কথা জানা গেছে। তবে, এটি ফিলিপাইনে ফিরে না এলে চলতি সপ্তাহজুড়ে ভিয়েতনামে তাণ্ডব চালাবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিণ চীন সাগরের মাঝখানে অবস্থিত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কিছু দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত দেশ ফিলিপাইন। প্রতি বছর প্রায় ২০টি ঝড় ও টাইফুন দেশটিতে আঘাত করে।

২০১৩ সালে দেশটিতে এ যাবৎকালের অন্যতম শক্তিশালী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় হাইয়ান আঘাত করে। এর প্রভাবে সে সময় একটি গ্রাম পুরো তলিয়ে যাওয়াসহ ৭ হাজার ৩০০ এরও বেশি মানুষ নিহত ও নিখোঁজ হয়।

সূত্র : সিএনএন।