ঘূর্ণিঝড় দানা : পূর্ব উপকূলীয় এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে ভারত
সতর্ক অবস্থানে বাংলাদেশ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৩:৫১, ২৪ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ২৩:৫৮, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের ধামারাতে আছড়ে পড়বে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। ছবি : বিএসএস নিউজ।
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানা এসব এলাকার দিকে এগিয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার।
ঘূর্ণিঝড়টি বাংদেশের বেশ কিছু উপকূলীয় এলাকাতেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা। এ কারণে এসব এলাকাগুলোতেও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা ঘূর্ণিঝড় দানা আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে আগামীকাল শুক্রবার ভারতের ওই রাজ্য দুটির উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করবে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। এটি দমকা বা ঝড়ো হাওয়ায় ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
ওড়িষ্যার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুকেশ মাহালিং বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
পার্শ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা জানিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আগামীকাল সকালে ভূখণ্ডে আছড়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের কয়লা রফতানিকারী এলাকা ধামারাতে আছড়ে পড়বে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এ অবস্থায় উভয় রাজ্যের সব বিমানবন্দরগুলোতেই আজ থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত বিমানের সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রায় ২০০ ট্রেনের শিডিউল বাতিল করেছে ওড়িষ্যা কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া, সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে গভীর সমুদ্র থেকে নিরাপদ স্থানে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুইটি রাজ্যের সব বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা এবং সমুদ্র সৈকত থেকে সব পর্যকটকে নিরাপদ স্থানে চলে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ অবস্থায় ওড়িষ্যা রাজ্যের পুরি নামের শহরটিতে থেকে অনেক পর্যকটই ট্রেনে করে এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলে রেলের মুখপাত্র কৌশিক মিতিয়া জানান।
এদিকে, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় দানার অগ্রভাগের প্রভাব এরইমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে দক্ষিণের সাতক্ষীরা জেলায় আজ সারাদিন থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের নৌযোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় দ্বীপ ও জেলাগুলোতে দমকা বা ঝড়ো বাতাসসহ ভারি (৪৪-৮৮মিলিমিটার) থেকে খুব ভারি (৮৯ মিলিমিটার) বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। কিছু কিছু এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কার কথাও জানানো হয়েছে।
এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস জানিয়েছেন।
এক্ষেত্রে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে এখনও পর্যন্ত তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয় যেতে পারে।
এছাড়া, জরুরি প্রয়োজনে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা যায়। এসব কেন্দ্রগুলোতে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য, নগদ অর্থ ও জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, প্রায় প্রতি বছরই এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে আঘাত করে। এসব ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রাণহানিসহ অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
১৯৯৯ সালে ভারতের ওড়িষ্যায় আঘাত হানা একটি ঘূর্ণিঝড় ওই এলাকায় টানা ৩০ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায়। এতে সে সময় ও রাজ্যে ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়।
চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত করা শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সে সময় কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়।
সূত্র : আল-জাজিরা, বিএসএস নিউজ।