অন্যান্য

টানা তৃতীয় দিনের মতো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কিউবা

সংযোগ চালুর নতুন উদ্যোগ ব্যর্থ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:৩০, ২০ অক্টোবর ২০২৪;  আপডেট: ২২:৪৯, ২০ অক্টোবর ২০২৪

টানা তৃতীয় দিনের মতো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কিউবা

অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছে কিউবার বাসিন্দারা।

কিউবার লাখ লাখ বাসিন্দা আজ রবিবার টানা তৃতীয় দিনের মতো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর নতুন একটি উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে। কবে নাগাদ সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনরায় চালু হবে, এ বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য জানা যায়নি।

এর মধ্যে দেশটির ১৬ শতাংশ বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়েছিলো। কিন্তু, পুরাতন আমলের বিদ্যুৎ গ্রিড ওভারলোড হয়ে গতকাল শনিবার আবারও সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিউবার ইলেকট্রিক ইউনিয়ন এসব তথ্য জানায়।

এদিকে, শনিবারের এ ঘটনার মধ্য দিয়ে শুক্রবার থেকে আজ পর্যন্ত টানা তৃতীয়বারের মতো কিউবার বিদ্যুৎ গ্রিড পুরোপুরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আর, দীর্ঘ এ সময় সম্পূর্ণ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে দেশের ১০ মিলিয়ন জনগণ ।

অন্যদিকে, কিউবার পূর্বাংশে ঘূর্ণিঝড় অস্কারের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফলে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাতাস ও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালুর কাজ আরও দীর্ঘায়িত হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন কিউবার প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়াল ম্যারেরো ক্রজ। কিন্তু, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় সৃষ্ট যান্ত্রিক জটিলতার কারণে তার এ ভাষণ প্রচারেও বিলম্ব হয়।

বিলম্বে প্রচারিত এ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগহীন অবস্থায় না রাখতে আমরা দেশের চলমান সীমিত উৎপাদনও বন্ধ করে দিয়েছি। জনগণকে সামান্যতমও বিদ্যুৎ দিতে আমরা দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরো বন্ধ করে দিয়েছি। ’

এ অবস্থায় বর্তমানে জেনারেটরের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য সেবা চালু রয়েছে এবং চিকিৎসকরা জরুরি চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক বার্তায় দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হোসে অ্যাঙ্গেল পোর্টাল মিরান্ডা এসব তথ্য জানান।

তবে, তা সত্ত্বেও রবিবার দিবাগত রাতে কিউবায় ছোট আকারে দুটি প্রতিবাদ-সমাবেশের কথা জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এছাড়া, বিভিন্ন ভিডিওতে রাজধানী হাভানার আরও কিছু জায়গায়ও বিদ্যুতের দাবিতে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার কিউবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদন কারখানাটিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। দেশটির বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এর পর পরই দেশটির একটি বড় অংশজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এ ঘটনার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সংযোগ ধীরে হলেও চালু হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়। কিন্তু, এর পরই শনিবার দ্বিতীয়বারের মতো পুরো দেশ আবারও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এ অবস্থায় গভীর সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছে কমিউনিস্ট শাসিত দেশটি। কারণ, পানি সরবরাহ ও খাবার সতেজ রাখার মতো বিষয়গুলো এখন অসম্ভব বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

এমনকি অনেক বাসিন্দাকে শুধু একটু রুটি কেনার জন্যও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দোকানের সামনে অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। তারপরও সবাইকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা যায়অন্যদিকে, অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলে বা যাদের ঘরে জেনারেটর রয়েছে, তাদেরকে ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে।

এছাড়া, বিদ্যুৎ না থাকায় বিমানবন্দরগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। টিকেট প্রিন্ট করা যেমন সম্ভব হচ্ছে না তেমনি সেখানকার এসিও কাজ করছে না বলে পর্যটকরা জানান। শুধু জরুরি বিদ্যুৎ দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করা হচ্ছে বলে জানা যায়।

বেশ কিছু ঘটনার প্রভাবে কিউবার বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর মধ্যে অব্যাহত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়সহ দরিদ্র দেশটির ভঙ্গুর অবকাঠামোর মতো বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য বলে জানা যায়।

সূত্র : সিএনএন।