থাইল্যান্ডে স্কুল বাসে আগুন : তিন শিক্ষকসহ ২০ শিশু নিহত
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ১ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ০১:০৮, ২ অক্টোবর ২০২৪
দুর্ঘটনার শিকার বাসটিতে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন অগ্নি নির্বাপক কর্মীরা। ছবি : গ্লোবাল নিউজ।
থাইল্যান্ডে একটি স্কুলে বাসে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে বাসে থাকা ২০ শিশুসহ ওই স্কুলের তিন শিক্ষক নিহত হয়েছেন। একটি শিক্ষা সফর থেকে রাজধানী ব্যাংককে ফেরার পথে আজ মঙ্গলবার বাসটি এ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
থাইল্যান্ডের ইউথাই থানি প্রদেশ থেকে আজ দ্বিতল বাসটি ব্যাংককের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথে ব্যাংককের উত্তরের পাথুম থানি প্রদেশে এটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
দুর্ঘটনায় বাসে থাকা আরও ১৯ শিশু ও তিনজন শিক্ষককে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে আহত ১৬ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দুর্ঘটনার সময় বাসটিতে ৪৫ জন যাত্রী ছিলো। এদের মধ্যে ছয়জন শিক্ষক ও ৩৯ জন প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী বলে বার্তা সংস্থা এপি সূত্রে জানা গেছে। তবে, শিক্ষার্থীদের বয়স নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়েছে। তিন থেকে ১৫ বছরের শিক্ষার্থীরা ওই বাসে ছিলো বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত এক বার্তায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন । তিনি বলেন, ‘একজন মা হিসেবে আমি এ দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
এ সময় আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করাসহ দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে, বাসটি উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন সিএনজি চালিত যান ছিলো বলে থাইল্যান্ডের পরিবহনমন্ত্রী সুরিয়াহে জুয়াংরংরুয়াংকিট জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় মন্ত্রী মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে এ দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা হবে। সম্ভব হলে এ ধরনের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জ্বালানি চালিত যানবাহন বাতিলের চেষ্টা করা হবে।’
এদিকে, বাসটির সামনের চাকা ফেটে যাওয়ার পর এটি মহাসড়কের কংক্রিটের বিভাজকের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় বাসটিতে থাকা অনেকের পক্ষেই বের হয়ে আসা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু, ঘটনার পর পরই বাসের চালক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে, পরে ব্যাংকক থেকে ১০০ মাইল উত্তরের একটি স্থানে তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে, এ বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে থাইল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানোতিন চার্নভিরাকুল জানান। তিনি বলেন, ‘চাকার দাগ, পোড়াস্থান এবং ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা দুর্ঘটনার সঠিক কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
তবে, ফেটে যাওয়া চাকা থেকে বের হওয়া আগুনের স্ফুলিঙ্গ বাসটিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত সিলিন্ডার গ্যাসের সংস্পর্শে আসে। এ থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ প্রধান কিট্টিরাট ফ্যানফেট এ তথ্য জানান।
এদিকে, মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া ও প্রাণহানির ঘটনায় থাইল্যান্ডজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত। অনিরাপদ যানবাহন ও চালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে বছরে দেশটিতে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
সূত্র : বিবিসি, গ্লোবাল নিউজ।