অন্যান্য

বিশ্বে প্রতিদিন নষ্ট হয় ১০০ কোটির বেশি ‘মিল’ : জাতিসংঘ

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২৭ মার্চ ২০২৪;  আপডেট: ২১:৫৬, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্বে প্রতিদিন নষ্ট হয় ১০০ কোটির বেশি ‘মিল’  : জাতিসংঘ

যেখানে প্রতিদিন ৮০ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকছে, সেখানে বিশ্বজুড়ে বিপুল পরিমাণ খাবার নষ্ট হচ্ছে।

সারা বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটির বেশি ‘মিল’(একবেলার খাবার হিসাবে) নষ্ট হয়। অথচ একই সময়ে বিশ্বে ক্ষুধার্ত থাকে প্রায় ৮০ কোটি মানুষ। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বুধবার জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচির (এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম বা ইউএনইপি) খাদ্য অপচয় সূচক প্রতিবেদন  (ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট) ২০২৪ প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে,  পূর্ণ বয়স্ক একজন মানুষ বছরে ৭৯ কিলোগ্রাম (১৭৪ পাউন্ড) খাবার নষ্ট করে। অর্থাৎ, প্রতিদিন সারা বিশ্বে কমপক্ষে ১০০ কোটি ‘মিল’ নষ্ট হয়।

অন্যদিকে, একই সময়ে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকে। একইসঙ্গে ,৭৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রতিদিন ক্ষুধার্ত থাকে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

উৎপাদিত খাদ্য বণ্টনের ক্ষেত্রে বিশ্বের সক্ষমতা নিয়ে এ প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়। একইসঙ্গে এ বিপুল পরিমাণ খাদ্য অপচয়ের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার সম্পর্কও তুলে ধরেন ইউএনইপির পরিচালক ইনঙ্গার অ্যান্ডারসেন।

তিনি বলেন, ‘খাদ্য অপচয় একটি বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি। যেখানে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধার্ত থাকছে সেখানে একইসময়ে বিশ্বজুড়ে বিপুল পরিমাণ খাবার নষ্ট হচ্ছে। এটি শুধু যে উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক বিশাল প্রতিবন্ধকতা, তা নয়; বরং, এ অপচয়ের প্রভাবে জলবায়ু ও প্রকৃতিকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে।’

তবে, এতে ‘খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়া’ ও ‘খাবার নষ্ট করার’ মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যাওয়া বলতে বোঝানো হয়েছে জমিতে সবজি নষ্ট হওয়া এবং সঠিক সময়ে সংরক্ষণ না করায় মাংস নষ্ট হয়ে যাওয়া। অন্যদিকে, খাবার নষ্ট করা বলতে এখানে মূলত বাসাবাড়ি, রেস্তোরা ও দোকানপাটে খাবার ফেলে দেওয়াকে বোঝানো হয়েছে।

এ হিসাবে ২০২২ সালে সারা বিশ্বে বাসাবাড়িতে ৬৩ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন খাবার নষ্ট করা হয়েছে। এটি বিশ্বে এক বছরে উৎপাদিত মোট খাবারের ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে রেস্তোরা বা এ ধরনের খাদ্যসেবা খাতে অপচয়ের পরিমাণ ২৮ এবং ছোটখাট দোকানপাটের ১২ শতাংশ ।

এ অবস্থায় ২০২২ সালে সারা বিশ্বে মোট ১০৫ কোটি মেট্রিক টন খাবার অপচয় হয়েছে বলে এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ বাসাবাড়ি, হোটেল, রেস্তোরা এবং ছোট ছোট খুচরা খাবারের দোকানের মোট খাবারের পাঁচ ভাগ নষ্ট হয়েছে।

এটি উৎপাদন থেকে শুরু করে একজন ব্যক্তির খাওয়া পর্যন্ত বিশ্বের মোট খাবারের ১৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে শুধু খাবার প্রক্রিয়াজাত করার সময়েই উৎপাদিত খাদ্যের মোট এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে যায়।

কিন্তু, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সঠিকভাবে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও সরক্ষণ না করায় খাবার নষ্ট হওয়া ও অপচয় করার সম্পূর্ণ অবস্থাটা উঠে আসেনি বলেও এতে বলা হয়েছে। তবে তাদের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতির উন্নতির কারণে শুধু জাতিসংঘই ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাসাবাড়িতে খাবার অপচয়ের দ্বিগুণ তথ্য পেয়েছে বলে জানানো হয়।

শুধু ধনী নয়, বিশ্বের অনেক মধ্যম আয়ের দেশেও প্রতিনিয়ত অনেক খাবার নষ্ট হচ্ছে।

অন্যদিকে, বৈশ্বিক কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণের ৮ থেকে ১০ শতাংশ হয় এই খাবার অপচয়ের কারণে। এটি বিমান পরিষেবা (এভিয়েশন) খাতের তুলনায় ৫ গুণ বেশি। এরপরও, জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনায় খাবার নষ্ট হওয়া ও অপচয়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে মাত্র ২১টি দেশ।

ফলে, বিমান পরিষেবা খাতে গ্যাসচালিত বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হলেও বিশ্বে খাদ্য অপচয়ের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়টি আলোচনার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

খাদ্য উৎপাদনে ভূমি ও পানির মতো প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবারগুলো যে ময়লার ভাগাড়ে ফেলা হয়, সেখানে তা পঁচে মিথেন গ্যাস তৈরি করে।

মিথেনের মতো শক্তিশালী এ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের প্রথম ২০ বছর আবহাওয়াকে এমনকি কার্বন-ডাই অক্সাইডের তুলনায় ৮০ গুণ বেশি উত্তপ্ত করে। এভাবে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে তা প্রক্রিয়াজাত হয়ে মানুষের ঘরে পৌঁছা এবং তা নষ্ট হওয়া ও করা অর্থাৎ, পুরো এ বৈশ্বিক খাদ্য প্রক্রিয়া বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী ।

এ ছাড়া, খাবারের অপচয় শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়। বরং, এর ফলে বিদ্যমান এ অবস্থা আরও খারাপের দিকে  যাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনটিতে মন্তব্য করা হয়।

কারণ, গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলো শীতপ্রধান দেশের তুলনায় বেশি খাবার নষ্ট করে। মূলত উত্তপ্ত আবহাওয়ার কারণে এসব দেশে খাবার পঁচে যাওয়ার আগেই তা সরক্ষণ ও পরিবহন করা প্রায় সময়ই সম্ভব হয় না বলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

তবে ধনী দেশগুলোতেই শুধু খাবারের অপচয় হয় বলে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এটি আসলে সঠিক নয় বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। কারণ, উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশে যে পরিমাণ খাবার নষ্ট হয়, একজন ব্যক্তির হিসাবে বছরে এ পার্থক্যের পরিমাণ মাত্র ৭ কিলোগ্রাম বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র : সিএনএন।