কানাডায় দাবানল : কমপক্ষে ৩০ হাজার পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২২:৫১, ২০ আগস্ট ২০২৩; আপডেট: ২২:৫৮, ২০ আগস্ট ২০২৩
ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যের প্রায় ৪০০টি স্থানে ভয়াবহ দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে।
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যের কমপক্ষে ৩০ হাজার পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের প্রায় ৪০০টি স্থানে ভয়াবহ দাবানল সৃষ্টি হওয়ার কারণে গতকাল শনিবার বাসিন্দাদের এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ অবস্থায় বাসিন্দাসহ জরুরি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় গত শুক্রবার থেকেই বাসিন্দাদের শহর ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া শুরু হয়। সে সময় প্রায় ১৫ হাজারের মতো পরিবারের উপর এ নির্দেশ জারি করা হলেও শনিবার বিকেলের মধ্যে এ সংখ্যা ৩০ হাজারে পৌঁছে।
এছাড়া পরিস্থিতি অনুযায়ী আরও প্রায় ৩৬ হাজার পরিবারকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
তবে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার গুরুত্ব বোঝানো যাচ্ছে না বলে রাজ্যের জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী বোউইন মা জানান।
তিনি বলেন, ‘এটা এখন আর স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যই শুধু নয়, বরং যারা তাদের সতর্ক করার জন্য বার বার সেখানে যাচ্ছেন, তাদের জন্যও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
এ অবস্থায় ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ইবে এরইমধ্যে ৩৫ হাজার বাসিন্দাকে শহর ত্যাগের নির্দেশ দেওয়াসহ আরও প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন বলে জানা গেছে।
দাবানলের কারণে এরইমধ্যে ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যের পশ্চিম কলোওনা শহরের অনেক বাড়িঘর ক্ষতগ্রিস্ত হয়েছে। শহরটিতে প্রায় ৩৬ হাজার বাসিন্দার বসবাস।
অন্যদিকে ওকানাগান লেইকের পাশে সৃষ্ট দাবানল ছড়িয়ে পড়ার কারণে রাজ্যটির কলোওনা শহর ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ শরটির বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার।
এছাড়াও কামলুপস, ওলিভার, পেনটিকটন, ভেরনন এবং ওসোইয়োস শহর ভ্রমণের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে কানাডার দক্ষিণের ইয়েলোনাইফ নামের শহরের দিকেও বড় আকারের দাবানল ধেয়ে আসছে। এ অবস্থায় গত শুক্রবারের মধ্যেই সেখানকার সব বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরইমধ্যে গাড়ি বা উড়োজাহাজে করে ২০ হাজাররে মধ্যে ১৯ হাজার বাসিন্দাই শহর ত্যাগ করেছে। বাকিদের মধ্যে ৩৯ জন রোগীকে ওই শহর থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে এদের মধ্যে কিছু বাসিন্দা নিজ শহরেরই নিরাপদ কোনো স্থানে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও তাদরেকেও শহর ত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে বলে শহরটির পরিবেশ ও জনসংযোগমন্ত্রী শেইন থমসন জানান।
উল্লখ্যে, কানাডার বিভিন্ন জায়গায় বর্তমানে প্রায় ১ হাজার দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ বলে দেশটির ইন্টারএজেন্সি ফরেস্ট ফায়ার সেন্টার (সিআইএফএফসি) সূত্রে জানা যায়।
মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া উত্তপ্ত ও শুষ্ক হয়ে ওঠাই বন-জঙ্গলে দাবানল সৃষ্টির মূল কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন।
চরম ও দীর্ঘমেয়াদী উত্তপ্ত আবহাওয়া মাটিতে আদ্রতার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আর এটি দাবানল তৈরির ক্ষেত্রে জ্বালানির মতো কাজ করে। সাথে থাকা জােরালো বাতাসের কারণে খুব দ্রুতই এ দাবানল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে বলে জলবায়ু বিশারদরা জানান।
কানাডায় সম্প্রতি নতুন করে ছড়িয়ে পড়া এ দাবানলের কারণে এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর কোনো খবর পাওয়া না গেলেও চলতি গ্রীষ্মে দেশটিতে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এ দাবানলে ৪ জন কর্মী আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র : বিবিসি।