অন্যান্য

ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’

হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে ভারত ও পাকিস্তান

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১৪ জুন ২০২৩;  আপডেট: ২৩:১৭, ১৪ জুন ২০২৩

ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’

ঘূর্ণিঝড় ‌মোকাবেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে গুজরাট সরকার।

ভারত ও পাকিস্তানের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকাল নাগাদ অতি প্রবল এ ঘূর্ণিঝড়টি দেশ দুটির বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানবে। এ অবস্থায় আগাম সতর্কতা হিসেবে এরইমধ্যে এসব এলাকা থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে আজ বুধবার দেশ দুটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে।

আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া এ ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমের রাজ্য গুজরাট এবং পাকিস্তানের উপকূলীয় সিন্ধু প্রদেশে আঘাত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে তা পাকিস্তানের করাচির কিছু অংশেও প্রভাব ফেলবে বলে জানানো হয়েছে।

এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাতে ভারতে ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

এ অবস্থায় উপকূলীয় জেলাগুলো থেকে এরইমধ্যে প্রায় ৩৮ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে গুজরাট সরকার জানিয়েছে।

আর পাকিস্তানের উপকূলীয় সিন্ধু প্রদেশ থেকে প্রায় ৬৫ হাজার বাসিন্দাকে বুধবার সকালের মধ্যে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা কর্তৃপক্ষ জানায়।  

এদিকে ভারতের গুজরাটে ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এ পরিস্থিতিতে এসব এলাকার ট্রেন চলাচল এরইমধ্যে বন্ধ করে দেওয়াসহ গতকাল মঙ্গলবার গুজরাটের উপকূলের তেল উত্তোলন কেন্দ্র থেকে ৫০ জন কর্মীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে কোস্ট গার্ড জানিয়েছে।  

এছাড়া ভারতের সবচেয়ে বড় দুটি বন্দর কান্দলা ও মান্দ্রার কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। আগাম সতর্কতা হিসেবে গুজরাট সরকার থেকে জনগণকে সমুদ্র সৈকত এড়িয়ে চলতে এবং জেলেদের সমুদ্রে না যেতে সতর্ক করা হয়েছে।

এরইমধ্যে গুজরাটের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচন্ড বাতাস ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে এ রাজ্যের কুচ্চা ও রাজকোটে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া গাছ উপড়ে পরাসহ বিভিন্ন জায়গায় দেয়াল ধসে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় যতই উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে গুজরাটের ওয়ারকা এলাকায় সাগরে বড় বড় ঢেউয়ের সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানা গেছে।  এ অবস্থায় কুচ্চা এলাকার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মান্দি সমুদ্র সৈকতের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করা সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে এ এলাকার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনা ও নৌবাহিনীসহ রাজ্য ও কেন্দ্রের উদ্ধারকর্মীরা মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজে সাহায্য করছে বলে জানা গেছে।   

এদিকে গুজরাটের পাশের রাজ্য মহারাষ্ট্রেও সমুদ্র উত্তাল থাকাসহ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এছাড়া মুম্বাইয়ের আরব সাগর সংলগ্ন জুহু এলাকা থেকে সোমবার বিকালে চার কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে সৈকতে ঘুরতে গিয়ে তারা নিখোঁজ হয় বলে জানা গেছে।

হাজার হাজার বাসিন্দাকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিচ্ছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের উপকূলীয় কাটি বন্দর থেকে বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি মাত্র ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে বলে দেশটির ন্যাশনাল ডিজাস্টার এজেন্সি (এনডিএমএ) জানিয়েছে।
 
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পাকিস্তানের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া দেশটির করাচি, হায়দেরাবাদ, বান্দো আলায়ার, শহীদ বেনাজিরাবাদ এবং সাংহার জেলার উপর দিয়ে প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পাকিস্তান এখনও ২০২২ সালে দেশটিতে সংঘটিত প্রবল বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ভয়াবহ ওই বন্যায় তখন দেশটির বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়াসহ প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন মানুষ নিহত হয়।

সূত্র : বিবিসি।