লোহিত সাগরে উত্তেজনা
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২:৪৩, ১২ জানুয়ারি ২০২৪; আপডেট: ০৯:১৩, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪
মার্কিন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে হামলায় নিয়োজিত এসব উড়োজাহাজের ছবি প্রকাশ করা হয়। ছবি : বিবিসি।
ইয়েমেনে সেনা হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে এ সেনা হামলা চালায় দেশ দুটি। এ হামলায় তাদের সমর্থন জানিয়েছে বাহরাইনসহ আরও কিছু পশ্চিমা দেশ।
বেশ কিছুদিন ধরেই লোহিত সাগরে চলাচল করা পশ্চিমা কিছু বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছিলো ইয়েমেনভিত্তিক হুতি বিদ্রোহীরা। মূলত গাজায় হামাসের উপর ইসরায়েলের আক্রমণের প্রতিবাদেই এ হামলা চালাচ্ছিলো ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এ গোষ্ঠী। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ইয়েমেনে আক্রমণ করলো পশ্চিমা জোট।
তবে এর মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে বিদ্যমান সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজন পড়লে এ আক্রমণের মাত্রা আরও বাড়াতে দ্বিধা করবে না বলে গতকাল সতর্ক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তিনি বলেন, ‘এ হামলার মধ্য দিয়ে আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা আমাদের কোনো কর্মীর উপর কোনো ধরনের আক্রমণ সহ্য করবে না। একইসঙ্গে আমাদের চলাচলের স্বাধীনতার উপর কোনো ধরনের আঘাতও আমরা মেনে নেবো না।’
তবে এ হামলাকে ‘বর্বরোচিত’ অ্যাখ্যা দিয়ে তারা ইসরায়েল অভিমুখী যেকোনো জাহাজে হামলা অব্যাহত রাখবে বলে শুক্রবার সতর্ক করে হুতি বিদ্রোহীরা। একইসঙ্গে এ হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে সতর্ক করে হুতির সেনা দলের মুখপাত্র ইয়াহইয়া সারি বলেন, ‘ইয়েমেনের জনগণের উপর এ হামলার পুরো দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনকে নিতে হবে। এবং আমরা এর যথাযথ জবাব দেবো।’
তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইয়েমেনের ৫টি এলাকায় এ পর্যন্ত ৭৩টি হামলা চালানো হয়েছে বলে ইয়াহইয়া সারি জানিয়েছেন। এসব হামলায় এ পর্যন্ত ৫ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছে বলেও জানানো হয়। তবে তাদের পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে হামলার কারণে এ অঞ্চল অশান্ত হলে পশ্চিমাদের এর দায়ভার নিতে হবে বলে সতর্ক করে ফিলিস্তিন। অন্যদিকে হামলার সমালোচনা করেছে হুতিদের সমর্থন দেওয়া ইরান। এছাড়া এ বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি সভা আহ্বানের অনুরোধ জানায় রাশিয়া। হামলা নিয়ন্ত্রণ ও এ অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর পরামর্শ দিয়েছে সৌদি আরব।
তবে আপাতত এ অঞ্চলে বাড়তি আর কোনো অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা নেই বলে আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদর দফতরের মুখপাত্র প্যাট্রিক রেইডার জানিয়েছেন। মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হচ্ছে আমরা এর ভালো ফলাফল পেয়েছি। কেউ বড় আকারের আঞ্চলিক সংঘাত প্রত্যাশা করে না। কিন্তু তারপরও, আমরা এ ধরনের ভয়ঙ্কর, দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণকে সমর্থন করতে পারি না।’
এদিকে পশ্চিমা এ হামলায় সমর্থন জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়াসহ কানাডা, নেদারল্যান্ডস এবং বাহরাইন। মূলত ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে নৌবাণিজ্যের প্রধান রুট হিসেবে লোহিত সাগরকে ব্যবহার উপযোগী রাখতে এটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগের একটি অংশ বলে জানিয়েছে দেশগুলো।
বিশ্বের নৌবাণিজ্যের প্রায় ১৫ শতাংশ এ পথের উপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো জানায়, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই আমাদের জীবন এবং বিশ্বের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এ বাণিজ্যিক পথকে যেকোনো হামলা থেকে রক্ষা এবং এতে মুক্ত চলাচল অব্যাহত রাখতে আমরা কোনো কার্পণ্য করবো না।’
এদিকে বেশ কিছুদিন থেকেই লোহিত সাগর দিয়ে যাতায়াত করা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত বা ইসরায়েলের বন্দরের উদ্দেশ্য যাত্রা করা এবং সরাসরি মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছে হুতি বিদ্রোহীরা। এ সময় ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোঁড়াসহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে সশস্ত্র ড্রোন দিয়েও হামলা চালায় তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের পর ইয়েমেনের ভূখন্ডে এটিই প্রথম কোনো হামলার ঘটনা। একইসঙ্গে গত অক্টোবরে ইসরায়েলের গাজা আক্রমণের প্রতিবাদে লোহিত সাগরে হুতিদের শুরু করা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এটিই প্রথম পশ্চিমা কোনো হামলার ঘটনা।
এর আগে হুতিদের আন্দোলন ঠেকাতে প্রায় এক দশক তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পশ্চিম সমর্থিত সৌদি জোট। পরবর্তীতে ইয়েমেনের একটি বড় অংশ নিজেদের দখলে নেয় হুতি বিদ্রোহীরা।
সূত্র : আল-জাজিরা, সিএনএন, বিবিসি।