ফাস্ট ফুডে আসক্তি হতে পারে এডিএইচডির লক্ষণ : গবেষণা প্রতিবেদন
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২:৩৩, ২ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১১:০০, ৫ জানুয়ারি ২০২৫
এডিএইচডিতে আক্রান্ত শিশু-কিশোরদের ইমপালসিভিটিই তাদের ফাস্ট ফুডের মতো খাবারের প্রতি আসক্তির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।
এডিএইচডি বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডারের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের সম্পর্কের ব্যাপারে নতুন তথ্য পেয়েছেন গবেষকরা। আগে মনে করা হতো চিপস, ফ্রাইস, এনার্জি ড্রিংকস বা কোমলপানীয়র মতো মুখরোচক কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে এডিএইচডির ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু, নতুন গবেষণা বলছে, কোনো ব্যক্তির এডিএইচডি থাকলে এ কারণেও এসব খাবারের প্রতি আসক্তি তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ, কারো মধ্যে যদি মুখরোচক কিন্তু অস্বাস্থ্যকর এসব খাবারের প্রতি আসক্তি দেখা যায়, তাহলে এমন হতে পারে যে তিনি এডিএইচডিতে আক্রান্ত।
জার্নাল অব অ্যাটেনশন ডিজঅর্ডার-এ গবেষণাটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। নেদারল্যান্ডের মাসত্রিখট ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি অ্যান্ড নিউরোসায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক লরা ডালনকির নেতৃত্বে নতুন এ গবেষণা পরিচালিত হয়। এতে ২০০১ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া ২,৫০০-এর বেশি শিশু-কিশোরের ওপর দীর্ঘমেয়াদে গবেষণার পর নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন গবেষকরা।
এতে দেখা গেছে, ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে যারা এডিএইচডিতে আক্রান্ত, এ ধরনের খাবারের প্রতি তাদের আসক্তি যাদের এডিএইচডি নেই- তাদের তুলনায় অনেক বেশি।
এ গবেষণায় পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, সরাসরি বা সার্বিকভাবে এডিএইচডি নয় বরং এ সমস্যায় আক্রান্তদের মধ্যে থাকা 'ইমপালসিভিটি' (অনিয়ন্ত্রিত আবেগ কিংবা চিন্তা-ভাবনা না করেই কাজ করে ফেলার প্রবণতা) তাদের এমন খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে বেশি সম্পর্কিত।
অর্থাৎ, এডিএইচডিতে আক্রান্ত শিশু-কিশোরদের ইমপালসিভিটিই তাদের ফাস্ট ফুডের মতো খাবারের প্রতি আসক্তির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। তাই গবেষকরা বলছেন, এ বয়সীদের 'ইমপালসিভ বিহেভিয়ার' নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে তাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত করে তোলা সহজ হতে পারে।
এ গবেষণায় খাবারকে ৫টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয় : স্ন্যাক, হেলদি, অ্যানিমেল-বেজড, সুইট ও বেভারেজ। দেখা গেছে, এডিএইচডিতে আক্রান্ত শিশু-কিশোররা এই ৫টির মধ্যে স্ন্যাক ক্যাটাগরির খাবার সবচেয়ে বেশি পছন্দ ও গ্রহণ করেছে। স্ন্যাক ক্যাটাগরিতে ছিলো মূলত অত্যধিক পরিমাণ চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক, ফ্রুট জুস, ফ্রাইস বা ভাজাপোড়া খাবার, চিপস ইত্যাদি।
এর আগে ২০১৫ সালে পরিচালিত এক গবেষণার পর গবেষকরা বলেছিলেন, মস্তিষ্কের যে অংশ মানসিক ও স্নায়বিক উদ্দীপনা জাগায় এবং আনন্দিত ও পুরস্কৃত হওয়ার মতো স্বস্তিকর অনুভূতি তৈরি করে, এডিএইচডিতে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে তা স্বাভাবিকভাবে বা পুরোপুরি কাজ করে না। ফলে, তাদের মধ্যে মুখরোচক খাবারের মাধ্যমে নিজেকে (মানসিক ও স্নায়বিকভাবে) উদ্দীপিত ও আনন্দিত করার প্রয়োজন বা প্রবণতা তৈরি হয়।
বর্তমান গবেষণাতেও আগের গবেষণার তথ্যকে সমর্থন জানিয়ে বলা হয়েছে, এডিএইচডিতে আক্রান্তরা এ ধরনের সন্তুষ্টি বা পরিতৃপ্তি স্বাভাবিকভাবে অর্জন করতে পারে না বলে তারা এর জন্য এসব খাবারকে বিকল্প বা বাহ্যিক একটি উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। এসব খাবার তাদের মস্তিষ্কের স্বাদ, গন্ধ, দৃশ্য ও স্পর্শের মতো জরুরি অনুভূতিগুলোকে উদ্দীপিত করে।
গবেষকরা বলছেন, এডিএইচডিতে আক্রান্ত নন - এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও খাবারের সঙ্গে আনন্দের অনুভূতির সম্পর্কের বিষয়টি রয়েছে। তবে, এডিএইচডিতে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে বিষয়টি অনেক বেশি সংবেদনশীল। আর, এ কারণেই তারা স্ন্যাক ক্যাটাগরির খাবারের প্রতি এবং বারবার কিংবা অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খাওয়ার প্রতি আসক্তি (বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডার) দেখায়।
২০১৭ সালে পরিচালিত এমন এক গবেষণায়ও অনুরূপ ফল মিলেছিলো। গবেষকরা বলছেন, এসব গবেষণার তথ্য খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত নানা ধরনের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, এডিএইচডি হলো মূলত স্নায়বিক এক ধরনের সমস্যা। সাধারণত ১২ বছরের আগেই (বিশেষ করে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সের) শিশুদের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে অতি-চঞ্চলতা ও অমনোযোগিতা দেখা যায়। সাধারণভাবে এটিকে শিশুর বিকাশজনিত একটি সমস্যা হিসেবে ধরা হয়। শৈশবে শুরু হয়ে এ সমস্যা পরিণত বয়স পর্যন্তও থেকে যেতে পারে।
সূত্র : ডেইলি মেইল।