গাজায় শিশুদের পোলিও টিকাদান কর্মসূচী শুরু
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪; আপডেট: ০১:০৯, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
টিকাদান কর্মসূচীর আওতায় আজ রবিবার উপত্যকাটিতে ৬ লাখ ৪০ হাজার শিশুকে পোলিও টিকা দেওয়া হয়। ছবি : ডয়চে ভেলে।
ফিলিস্তিনের গাজায় শিশুদের জন্য পোলিও টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচীর আওতায় আজ রবিবার উপত্যকাটিতে ৬ লাখ ৪০ হাজার শিশুকে পোলিও টিকা দেওয়া হয়।
এ টিকাদান কর্মসূচী চলমান রাখতে আজ থেকে পরবর্তী তিনদিনের জন্য যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসা সম্ভব হয়েছে বলে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।
সম্প্রতি গাজায় গত ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো পোলিও রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এ উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। তবে, এর সুফল পেতে হলে অল্প সময়ের মধ্যেই ১০ বছরের নিচে অন্তত ৯০ শতাংশ শিশুকে এ টিকার আওতায় আনতে হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি কারেম সালেম চেক পয়েন্ট দিয়ে ইউনিসেফ প্রায় ১৩ লাখ পোলিওর টিকা গাজায় নিয়ে আসে। আরও প্রায় ৪ লাখ ডোজ খুব শিগগিরই নিয়ে আসা হবে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এদিকে, আজ মধ্য গাজার তিনটি কেন্দ্রে এই টিকাদান কর্মসূচী চলে। পরবর্তীতে উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণাংশেও এ কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হবে। তবে, আজকে শুধু দেইর আল-বালাহ ক্লিনিকেই প্রায় দুই হাজার শিশু এ টিকা পেয়েছে বলে জাতিসংঘের মুখপাত্র লুইস ওয়াটারিটজ জানান।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র সালিম ওয়েস বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সব কার্যক্রম ভালোভাবেই চলছে এবং আমরা প্রত্যাশিত সাড়া পেয়েছি।’
এদিকে, সফলভাবে এ কর্মসূচী পরিচালনার জন্য আজ থেকে আগামী তিনদিন স্থানীয় সময় সকাল ছয়টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’ থাকবে বলে জানা গেছে। তবে, প্রয়োজন অনুযায়ী সময় আরও বাড়ানো হতে পারে।
তবে, বিষয়টি কঠিন উল্লেখ করে ইউনিসেফের এক কর্মী বলেন, ‘চলমান একটি যুদ্ধক্ষেত্রে এ ধরনের কর্মসূচী পরিচালনা এবং সফল করা এক কথায় প্রায় অসম্ভব। পরিবারগুলো যাতে নির্ভয়ে তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে টিকা কেন্দ্রে আসতে পারে, এ বিষয়টি নিশ্চিত করা এখন খুবই জরুরি। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার দিকে নজর রাখাও একইসঙ্গে জরুরি।’
গাজার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় এ ধরনের কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া একটি বিশাল কষ্টসাধ্য ব্যাপার উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গাজার অধিকাংশ রাস্তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছানো কষ্টকর। এছাড়া, এখানে প্রায় প্রতিদিনই নিরাপত্তাজনিত নানা ঘটনা ঘটে চলেছে।’
একইসঙ্গে, হাসপাতালগুলো সচল রাখতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকায় টিকাগুলো সংরক্ষণে শীতল সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে এক চিকিৎসক জানান। এছাড়া, যুদ্ধবিরতি চলমান থাকলেও বহু গাজাবাসীই বাড়ি থেকে টিকা কেন্দ্রে আসতে ভয় পাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। এ কারণে এ সময়ের মধ্যে জন্ম নেওয়া অনেক শিশুই নিয়মমাফিক টিকা পায়নি।
ফলে, এ অঞ্চলে পোলিওর মতো রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই, বর্তমানে এ রোগের বিস্তার ঠেকাতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রয়োজনীয় টিকাদান কর্মসূচী অব্যাহত রাখা অত্যন্ত জরুরি বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।
এসব এলাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পোলিও নির্মূল কর্মসূচীর পরিচালক ও চিকিৎসক হামিদ জাফারি বলেন, ‘পুরো অঞ্চলটিই এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ রোগের বিস্তার দমন সম্ভব না হলে শুধু গাজা নয় বরং পশ্চিম তীর, ইসরায়েলসহ প্বার্শবর্তী অন্যান্য দেশেও তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
তবে, প্রাথমিক পর্যায়ে গাজাকে কেন্দ্র করেই এ কর্মসূচী শুরু হয়েছে। কারণ, এখানকার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই শিশু।
সূত্র : বিবিসি।