জলবায়ু

সিঙ্গাপুরে সৌরশক্তি রফতানির অনুমোদন অস্ট্রেলিয়ার

জলবায়ু ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২১ আগস্ট ২০২৪;  আপডেট: ০০:২১, ২২ আগস্ট ২০২৪

সিঙ্গাপুরে সৌরশক্তি রফতানির অনুমোদন অস্ট্রেলিয়ার

অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সানক্যাবলের এ প্রকল্পটি পরিচালিত হবে। ছবি: ইন্টারনেট।

সিঙ্গাপুরে সৌরশক্তি রফতানির অনুমোদন দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আজ বুধবার অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী একটি সৌরশক্তি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সানক্যাবল নামের এই প্রতিষ্ঠানটি ২০ বিলিয়ন ডলারের এ সৌর প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সিঙ্গাপুরে সৌরশক্তি সরবরাহ করবে।

সাগরের তলদেশ দিয়ে ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবলের সাহায্যে এ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। ২০৩০ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে এর মধ্য দিয়ে সিঙ্গাপুরে বিদ্যুতের চাহিদার ১৫ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশমন্ত্রী তানিয়া প্লিবারসেক এ বিষয়ে বলেন যে, এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে বিশ্বের সর্বাধিক সৌরশক্তি উৎপন্ন হবে, যা দিয়ে অনায়াসেই ৩০ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব । এ প্রকল্পের অধীনে সৌর প্যানেল, ব্যাটারি এবং ক্যাবলের সাহায্যে সিঙ্গাপুরে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

একইসঙ্গে, এ প্রকল্পের আওতায় দেশটিতে ১৪ হাজার ৩০০টি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলেও জানানো হয়। আর, এর মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়া নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসবে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

তবে, প্রকল্পটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। বিশেষত, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার খরগোশ সাদৃশ বিলুপ্ত প্রায় গ্রেটার বিলবির আবাস্থল যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, প্রকল্পটি অস্ট্রেলিয়ায় পরিবেশ সনদ পেলেও আরও কিছু বিষয় নিয়ে জটিলতা রয়ে গেছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রকল্পটি মূল্যায়নের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।

অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সানক্যাবলের এ প্রকল্পটি পরিচালিত হবে। অঞ্চলটিতে প্রচুর সূর্যালোক থাকায় অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘরগুলোতেই এখান থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৪ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এছাড়া, আরও ২ গিগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সিঙ্গাপুরে সরবরাহ করা হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।

অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তি খাতের ধনকুবের ও পরিবেশকর্মী মাইক ক্যানন-ব্রুকস এ প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন। সানক্যাবল অস্ট্রেলিয়ার নির্বাহী পরিচালক ক্যামেরন গার্নসওর্দি এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে বলেন, ‘সানক্যাবল বর্তমানে প্রকল্পের পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা করছে। এক্ষেত্রে, প্রকল্পের কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিতে ২০২৭ সালের মধ্যে চূড়ান্ত একটি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

তবে, প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি। এদিকে, গত বছরের জানুয়ারিতে সানক্যাবলে মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছুদিন স্বাধীন প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সে সময় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা নিয়ে ক্যানন-ব্রুকস ও আরেক ধনকুবের অ্যান্ড্রু ফরেস্টের মধ্যে দ্বন্ধের জের ধরে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ৩২ শতাংশ নবায়নযোগ্য এবং ৪৭ শতাংশ কয়লা থেকে পাওয়া গেছে বলে দেশটির সরকারি তথ্যে জানা গেছে।

এদিকে, অস্ট্রেলিয়া-এশিয়া পাওয়ার লিঙ্ক নামের এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ৬ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদিত এ বিদ্যুতের এক-তৃতীয়াংশ সাগরের তলদেশ দিয়ে ক্যাবলের সাহায্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সরবরাহ করা হবে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে, আল-জাজিরা।