দেশের সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান সেনাপ্রধানের
স্বদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২:৩৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:৫৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সবাই যেন সুখে–শান্তিতে থাকতে পারে, সে লক্ষ্যে সেনাবাহিনী কাজ করছে বলে তার বক্তব্যে সেনাপ্রধান উল্লেখ করেন ।
দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানালেন বাংলাদেশ সেনবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ সময় নিজেদের মধ্যে হানাহানি বিরাজমান থাকলে দেশ ও জাতি এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
২০০৯ সালে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত নির্মম হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে আজ মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন। রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) ক্লাবের আয়োজনে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের হেলমেট হলে এ অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এই দেশ আমাদের সবার উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা সবাই সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি।’
দেশ–জাতি যেন একসঙ্গে থাকতে পারে, সে লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতের বিরোধ থাকতে পারে, চিন্তাচেতনার বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু দিন শেষে দেশ ও জাতির দিকে খেয়াল করে আমরা সবাই যেন এক থাকতে পারি। তাহলেই এই দেশটা উন্নত হবে, এই দেশটা সঠিক পথে পরিচালিত হবে। না হলে আমরা আরও সমস্যার মধ্যে পড়তে যাব।’
সবাই যেন সুখে–শান্তিতে থাকতে পারে, সে লক্ষ্যে সেনাবাহিনী কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন সেনাপ্রধান।
এদিকে, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এর মধ্যে দেশের বর্তমান অরাজক পরিস্থিতি এবং একে-অপরের প্রতি দোষারোপ ও হানাহানি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে মনে করেন তিনি। কারণ, এর ফলে অপরাধীরা অপরাধ করার সুযোগ পাচ্ছে এবং বিচারের ভয় পাচ্ছে না বলে সেনাপ্রধান সতর্ক করেন।
এ ক্ষেত্রে সবাই সংগঠিত, একত্রিত থাকলে সম্মিলিতভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। একইসঙ্গে, সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সমান গুরুত্ব দিয়ে তাদের যথাযথভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি করাও জরুরি বলে সেনাপ্রধান জানান।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আজকে পুলিশ সদস্য কাজ করছে না। একটা বড় কারণ হচ্ছে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা। অনেকে জেলে। র্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই প্যানিকড (আতঙ্কিত)। বিভিন্ন দোষারোপ, গুম-খুন ইত্যাদির তদন্ত চলছে। অবশ্যই তদন্ত হবে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এমনভাবে কাজটা করতে হবে, যেন এই অর্গানাইজেশনগুলো আন্ডারমাইন না হয়। এই অর্গানাইজেশনগুলোকে যদি আন্ডারমাইন করে আপনারা মনে করেন যে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বিরাজ করবে, সবাই শান্তিতে থাকবেন, এটা হবে না। সেটা সম্ভব না। আমি আপনাদের পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে আলোচনায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আরও বলেন, ‘এখানে যেসব উচ্ছৃঙ্খল কাজ হয়েছে, সেটা আমাদের নিজস্ব তৈরি। এটা আমাদের নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারড, আমরা নিজেরা এইগুলো তৈরি করেছি। এই বিপরীতমুখী কাজ করলে দেশে কখনো শান্তিশৃঙ্খলা আসবে না, এই জিনিসটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।’
বক্তব্য দেওয়ার এক পর্যায়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আশাবাদ জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দেশে একটা ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশনের জন্য (সামনের) দিকে ধাবিত হচ্ছি। তার আগে যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন, অবশ্যই সরকার এদিকে হেল্প করবে।’
বক্তব্যে সেনাবাহিনীর প্রতি আক্রমণাত্মক কথা না বলার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, ‘একটা কমন জিনিস আমি দেখতে পাচ্ছি, সেনাবাহিনী এবং সেনাপ্রধানের প্রতি বিদ্বেষ কারও কারও। কী কারণে আজ পর্যন্ত আমি এটা খুঁজে পাইনি।’
এ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘আমরা হচ্ছি একমাত্র ফোর্স যেটা আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, দাঁড়িয়ে আছি প্ল্যাটফর্মে। আমাদের সাহায্য করেন, আমাদের আক্রমণ করবেন না। আমাদের অনুপ্রাণিত করেন, আমাদের উপদেশ দেন। ...আমাদের প্রতি আক্রমণ করবেন না। উপদেশ দেন, আমরা অবশ্যই ভালো উপদেশ গ্রহণ করব। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই এবং দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোয় রাওয়া ক্লাবের চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুল হকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সূত্র : বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম।