ঘূর্ণিঝড় রিমাল
আগামীকালও দেশজুড়ে অব্যাহত থাকবে বৃষ্টিপাত
প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৭ মে ২০২৪; আপডেট: ২৩:০৩, ২৭ মে ২০২৪
স্বদেশ ডেস্ক
পটুয়াখালির কুয়াকাটা সৈকতে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত।
উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার পর প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল বর্তমানে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে আজ সোমবার সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি দুর্বল হয়ে বর্তমানে যশোর ও এর আশেপাশের এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে অব্যাহতভাবে বৃষ্টি ঝরিয়ে আরও দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের একটি অংশ ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের ওপরে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে অব্যাহতভাবে আজ সারাদিন ঢাকায় দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আগামীকালও থেমে থেমে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাবে বলে আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন।
এদিকে, আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সারারাত জেগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের পরিস্থিতি মনিটরিং করেছেন। আর আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শনে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে দলের নেতাকর্মীরাও যাবেন।’
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান জানিয়েছেন। এ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে দেশের মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একইসঙ্গে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত এবং ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎ খাতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে দেশের বড় একটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। কয়েক কোটি মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও এখনো প্রায় পৌনে তিন কোটির বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ–সুবিধার বাইরে আছেন। আজ সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো
হয়।
এদিকে, উপকূলীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এসব এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার বন্ধ রয়েছে। ফলে, মোবাইল সেবায় বিঘ্ন ঘটছে বলে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) সূত্রে জানা গেছে।
তবে, নেটওয়ার্ক দ্রুত ফিরিয়ে আনতে মোবাইল অপারেটররা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালে প্রভাবে শুরু হওয়া অতিবর্ষণে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়ায় উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে অনেক গাছপালা। এতে শহরে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বহু মানুষ।
এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আজ ও আগামীকাল রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিও হতে পারে বলে বলে আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে জানানো হয়। এছাড়া, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে আজ ঢাকায় ১২৫ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ১৩৮, কক্সবাজারে ১৩৯ ও পটুয়াখালীতে ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বুধবার ঘূর্ণিঝড় রিমাল স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং সিলেটের দিকে চলে যাবে। পরবর্তীতে তা আরও উত্তর-পশ্চিমে সরে গিয়ে ভারতের আসামের দিকে চলে যাবে। এর মধ্য দিয়ে দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
সূত্র : বাসস ও প্রথম আলো।