স্বদেশ

উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল

স্বদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৩২, ২৬ মে ২০২৪;  আপডেট: ২২:৩৫, ২৬ মে ২০২৪

উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, পটুয়াখালী, ২৬ মে। ছবি সূত্র : প্রথম আলো।

উপকূলে আঘাত হেনেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল । আজ রবিবার রাত প্রায় আটটায় ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ–পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে।

আরও উত্তর দিকে সরে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র  পরবর্তী এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে, সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী ৫-৭ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়।

এর আগে আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে খুলনা উপকূলের কাছে সুন্দরবনের দিকে প্রবেশ করে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বিস্তৃত ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ। এর প্রভাবে উপকূলে ব্যাপক বৃষ্টি হয়।

আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।

এটি আজ সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার পশ্চিম- দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিলো।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে মানুষের জানমাল রক্ষায় সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান । এর অংশ হিসেবে এরইমধ্যে আট লাখের বেশি উপকূলবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।   

আজ সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবেলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবেলায় যাবতীয় কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে আজ সন্ধ্যা থেকে আগামীকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ট্যানেল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে, এ সময় সব ধরনের লঞ্চ চলাচলও বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।

সূত্র : বাসস, প্রথম আলো।