পরাজয়ের পরও ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা জাপানি প্রধানমন্ত্রীর
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:২৪, ২৮ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ২২:১৪, ২৯ অক্টোবর ২০২৪
জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর এই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিগেরু ইশিবা।
জাপানের ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। সাধারণ নির্বাচনে তার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) পরাজিত হলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। সরকারি গণমাধ্যম এনএইচকেতে প্রচারিত এক ভাষণে আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।
নির্বাচনে তার দলের পরাজয়ের বিষয়টি মেনে নিয়ে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে জাপানের জনগণ এলডিপি সম্পর্কে তাদের মনোভাব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। আর, আমরা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আবারও আমাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো।’
মূলত, অর্থ আত্মসাৎ ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুনীর্তির মতো বিষয়গুলো আমলে নিয়ে দ্রুতই দলের সংস্কারের অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী ইশিবা। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই জনগণের সমালোচনার জবাব দিতে হবে। আর, এভাবেই আমি নির্বাচনে পরাজয়ের দায়ভার নিজ কাঁধে তুলে নিবো।’ এ সময় একইসঙ্গে তিনি জাপানের মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলকে আরও উন্নত করা ও মূল্যস্ফীতি রোধেরও অঙ্গীকার করেন।
গতকাল রবিবার দেশটিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে এলডিপি ও এর জোট কোমেইতো মোট ২১৫টি আসন পায়। কিন্তু, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৩৩টি আসন। ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম দলটি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হলো। অন্যদিকে, বিরোধী কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (সিপিডি) পেয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪৮টি আসন।
জাপানে ১৯৫৫ সাল থেকে প্রায় নিয়মিত বিরতিতে ক্ষমতায় রয়েছে এলডিপির জোট সরকার। কিন্তু, চলতি বছরের সাধারণ নির্বাচনে তাদের পরাজয় ছিলো এ দশকের সবচেয়ে বড় পরাজয়।
মূলত, বেশ কয়েক বছর ধরেই নানা ধরনের কেলেঙ্কারিতে দলটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে, তাদের ভোটার সংখ্যা যেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমতে থাকে, তেমনি ক্রমাগতই জনসমর্থন হারাতে থাকে দলটি। এ অবস্থায় বর্তমানে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে এক প্রকার অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
কারণ, বর্তমানে জাপানের সংসদে অধিবেশন আহ্বান ও নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে আর মাত্র ৩০ দিন সময় রয়েছে। এ অধিবেশনে যাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হবে, তার দল বা জোট দেশটিতে সরকার গঠন করবে। এক্ষেত্রে, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন নেই।
এ অবস্থায় তাদের জোট আর বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই বলে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা জানান। এর মধ্য দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও তার দল জাপানের ক্ষমতায় আসবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে, এটি বাস্তবায়িত হলেও পরবর্তীতে এককভাবে আইন পাসের ক্ষমতা হারাবে তার দল।
অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো একজোট হয়ে সরকার গঠন করতে পারে। তবে, তা বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক কম। কারণ, জাপানের বিরোধী দলগুলো আগে কখনো একজোট হতে পারেনি। তাছাড়া, সরকার গঠন প্রশ্নে ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে তাদের প্রতি আস্থার অভাব।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জাপানের রাজনীতিতে দ্রুত পটপরিবর্তন হতে থাকে। গত আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আকস্মিকভাবেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে নিজ দলের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথে চলতি মাসের প্রথমেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন শিগেরু ইশিবা।
সূত্র : সিএনএন, ডয়চে ভেলে।