সিঙ্গাপুরে করোনার কঠোর বিধিনিষেধে প্রবাসী শ্রমিকরা : আল জাজিরা
প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১:৩৬, ৩০ জানুয়ারি ২০২২; আপডেট: ০১:৫২, ২৯ অক্টোবর ২০২২
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডরমিটরিতে শ্রমিকদের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরে প্রবাসী শ্রমিকরা কোভিড মহামারির কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। দেশটির অন্য নাগরিকদের জন্য এসব নিষেধাজ্ঞা অনেকটা শিথিল করা হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না এ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। এ কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শ্রমিকদের মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা আজ রবিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, কোভিড মহামারির কারণে দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে অনেকদিন ধরেই কঠোর বিধিনিষেধ বজায় ছিলো। সম্প্রতি অন্য নাগরিকদের জন্য এ বিধিনিষেধ অনেকটা শিথিল করা হয়েছে। তবে দেশটিতে বসবাসকারী ৩ লাখের বেশি প্রবাসী শ্রমিক এখনও কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছেন। এমনকি পূর্ণ ডোজ টিকা নেওয়ার পরও প্রবাসী শ্রমিকদের সেখানে অবস্থান ও চলাফেরার ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে।
দেশটির বিভিন্ন স্থানে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য তৈরি করা ডরমেটরিগুলো ধূসর রঙের অস্থায়ী দেয়াল তুলে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। ভবনগুলোর চারপাশ উচু কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। ট্রাকে করে তাদের কর্মক্ষেত্রে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে। কাজ ছাড়া বের হতে চাইলে বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে 'এক্সিট পাস' নিতে হচ্ছে শ্রমিকদের।
প্রতিবেদনটিতে একাধিক শ্রমিকের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তারা সেখানে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারছেন না। প্রায় দুই বছর ধরে ডরমিটরিতে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে থাকার কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে।
প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী অলাভজনক সংগঠন হেলথসার্ভে-এর নির্বাহী পরিচালক মাইকেল চি-কে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, 'ডরমিটরিতে গাদাগাদি করে থাকার কারণে শ্রমিকদের পক্ষে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হয় না। ফলে তারাই সংক্রামক এ রোগটিতে আক্রান্তের সব থেকে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে। সংক্রমণের প্রথম বছর প্রবাসী শ্রমিকদের ৯০ শতাংশই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। ফলে সিঙ্গাপুর সরকার শ্রমিকদের ডরমিটরিগুলোতে লকডাউন দেওয়াসহ তাদের চলাচলের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করে।'
মাইকেল চি-কে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, 'এভাবে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এমনকি ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকিও তৈরি করছে। তাদের মধ্যে নিজেদের চাকরি, টাকা-পয়সা, দেশে থাকা পরিবার ও স্বাস্থ্য নিয়ে আগে থেকেই নানা দুশ্চিন্তা ছিলো, এ বন্দিদশা তা আরও বাড়িয়ে তুলছে।'
ওই প্রতিবেদনে প্রবাসী শ্রমিকদের সম-অধিকার নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ট্রানসিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্স অ-কে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, 'কোভিডের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকার এখন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বদলে প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধকে স্থায়ী করার চেষ্টা করছে বলেই মনে হচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি, মহামারি শেষ হয়ে গেলেও শ্রমিকদের ওপর আরোপিত এ বিধিনিষেধ থেকে যাবে।'
এ বিষয়ে আল জাজিরার পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরের শ্রমমন্ত্রী টান সি ল্যাংয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। অবশ্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক লিখিত বিবৃতির সূত্রে প্রতিবেদনটিতে এ বিষয়ে হয়, 'সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসের টিকা আসার আগেই অর্থাৎ ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে আমরা ডরমেটরিগুলোতে বাস করা প্রবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখেছি, যার ফলে সেখানে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ছিলো একেবারেই নগণ্য। আর টিকা আসার পর এ সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।'
চলমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের পরিপূর্ণ মানসিক সহায়তা দেওয়ার জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যে-কোন শ্রমিক নিজের সমস্যার কথা জানাতে ও এ সংক্রান্ত সেবা নিতে পারে। একইভাবে সশরীরে উপস্থিত হয়েও এ ধরনের কাউন্সেলিং সেবা নেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, 'আমরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের বিনোদন ও সামাজিক বিভিন্ন চাহিদা পূরণে কাজ করে যাচ্ছি।'
উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশভিত্তিক সংখ্যা প্রকাশ করা না হলেও বেশিরভাগ শ্রমিক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকেই যায় বলেও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।